নিজস্ব প্রতিবেদক: পৃথিবীতে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য ক্রমাগত বাড়ছে। ধনীদের ধনী হওয়ার প্রক্রিয়ার কারণেই দরিদ্র মানুষ দরিদ্রতর হচ্ছে। তাই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষের মাঝে যে তীব্র আয়বৈষম্য তৈরি হয়েছে, তা দূর করার জন্য নিবর্তনমূলক কর ব্যবস্থা বাতিল করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপসহ (ইক্যুইটিবিডি) ১২টি নাগরিক সমাজ সংগঠন। একইসঙ্গে ‘ধনীদের কর নিন, দরিদ্রের নয়’ দাবিকে সামনে আনেন তারা।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলো হলো, ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইক্যুইটিবিডি), বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরাম, সিপিআরডি, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, অনলাইন নলেজ সোসাইটি, অ্যাসোড, ওয়াটার কিপার বাংলাদেশ, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, সিএসআরএল, জেএসকেএস ও কোস্ট ফাউন্ডেশন।
সমাবেশ পরিচালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ এবং সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের এএসএম বদরুল আলম। এসময় সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সমতা ও ন্যায্যতাভিত্তিক দেশ গড়ার লক্ষ্যে পাঁচটি সুপারিশও তুলে ধরা হয়।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইক্যুইটিবিডি) আয়োজিত ধনীদের কর নিন, দরিদ্রের নয় শীর্ষক এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা।
বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের ৫৪তম সম্মেলনের প্রাক্কালে বিশ্বব্যাপী চলমান নাগরিক সমাজের নেটওয়ার্ক ফাইট ইনইকুয়েলিটি অ্যালায়েন্সের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইক্যুইটিবিডি) আহ্বানে ১২টি নাগরিক সমাজ সংগঠন এই সমাবেশের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে মোতাহার হোসেন বলেন, পরোক্ষ করের মাধ্যমে মূলত একজনের কর অন্যজনকে দিতে বাধ্য করা হয়। একটি কোম্পানির ওপর ধার্য করা ট্যাক্স প্রদান করে ক্রেতা সাধারণ। এতে দরিদ্র মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে যে কোম্পানি আয় করছে, সে কর থেকে অব্যাহতি পায়। এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা দরকার।
ইক্যুইটিবিডির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আমিনুল হক তার বক্তব্যে বলেন, স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে পুঁজি ও মুনাফা পাচার বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক ট্যাক্স নেটওয়ার্কের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রয়োজন। এজন্য এ নেটওয়ার্ককে জাতিসংঘের আওতাধীন করতে হবে এবং স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এর সদস্য বানাতে হবে। কারণ, এসব দেশ থেকেই বিপুল পরিমাণে মুনাফা ও পুঁজি পাচার হয় উন্নত বিশ্বে।
সিপিআরডির ইমরান হোসেন বলেন, বাংলাদেশে কর ফাঁকি দেওয়া একটা স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই। পরোক্ষ করা হ্রাস করার জন্য আয়কর এবং সম্পদের ওপর কর আদায়ে জোর দিতে হবে।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, একটা বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থা বিলোপের জন্যই বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। অথচ এখন বাংলাদেশে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য সবচেয়ে বেশি। একটা জবাবদিহিতামূলক ও সুশাসনভিত্তিক কর ব্যবস্থার মাধ্যমে এই বৈষম্য হ্রাস করা সম্ভব।
তাদের পাঁচটি সুপারিশ হলো
কর ফাঁকি রোধ করাসহ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সুষম ও ন্যায্যতাভিত্তিক কর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পুঁজি ও মুনাফা বিদেশে পাচার রোধে গবেষণা ও অনুসন্ধানসহ অন্যান্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সব ধরনের পরোক্ষ কর পর্যায়ক্রমে হ্রাস করার মাধ্যমে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ওপর থেকে করের বোঝা লাঘব করতে হবে। ভ্যাট ও অন্যান্য যেসব রাজস্ব পরোক্ষ করের সুযোগ সৃষ্টি করে, সেগুলো সংস্কার করতে হবে। আসন্ন বিশ্ব অর্থনীতি ফোরাম ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশ যেন সমতা ও ন্যায্যতাভিত্তিক অবস্থান গ্রহণ করে।