নিজস্ব প্রতিবেদক: এক দশক আগে সাভারে রানা প্লাজা ধসে হতাহতের মামলার বিচারকাজ ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আজ সোমবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ভবন মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেওয়া হয়।
এ আদেশের পর সোহেল রানার আইনজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এ সময়ের মধ্যে বিচারকাজ শেষ না করতে পারলে সোহেল রানার জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।’
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আটতলা রানা প্লাজা ভেঙে পড়লে শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন, আহত হন আরো হাজারখানেক শ্রমিক
বাংলাদেশের ওই ঘটনা সে সময় আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। দেশে কারখানার অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এলে সরকার ও মালিকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।
ভবনধসে প্রাণহানির ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ। রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে এজাহারে আসামি করা হয়। তবে তদন্ত শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মৃত্যু ঘটানোসহ দণ্ডবিধির ৩০২, ৩২৬, ৩২৫, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪২৭, ৪৬৫, ৪৭১, ২১২, ১১৪, ১০৯, ৩৪ ধারায় বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ২০১৫ সালের ১ জুন অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে। পাঁচ শতাধিক সাক্ষী এ মামলায়। তাদের মধ্যে ৩৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর এ মামলায় নিম্ন আদালতে সোহেল রানার জামিন আবেদন খারিজ হয়। এরপর তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।
২০২১ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট তাঁর জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন। সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত; যা এখন স্থগিত আছে। পরে ২০২২ সালে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে ফের আবেদন করেন সোহেল রানা।
আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুল দেন। রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ৬ এপ্রিল রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে সোহেল রানাকে নিয়মিত জামিন দেওয়া হয়। জামিনের এক মাস পর ৯ মে সে আপিল স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে সে জামিন স্থগিত করে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ; সে আবেদনটিই নিষ্পত্তি করে আদেশ দেওয়া হলো।