নিজস্ব প্রতিবেদক: গত কয়েক মাস ধরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয়। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত আহসানুল ইসলাম টিটুও সচিবালয়ে তার প্রথম কর্মদিবসেই বলেছেন, দ্রব্যমূল্যকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনাই তার সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রতিমন্ত্রী আহসানুল বলেন, দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণ আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ডলারের দাম বাড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্যে বেড়ে গেছে। তারপরও কেউ যেন সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মজুতদারদের শক্ত হাতে দমন করা হবে।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক টিটু এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য টিসিবি থেকে এক কোটি পরিবারকে ন্যায্য মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে তেল, চিনি, ডালের পাশাপাশি রমজান মাসে ন্যায্যমূল্যে ছোলা ও খেজুরসহ মোট পাঁচটি পণ্য বিতরণ করা হবে। বর্তমানে এক কোটি পরিবারের মধ্যে ২০ লাখ লোককে কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি ৮০ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষকেও টিসিবি পণ্য দেওয়া হচ্ছে। জুনের মধ্যে পুরো এক কোটি পরিবারকে কার্ডের আওতায় আনা হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং বাড়ানো হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, আজকের দর দামকে ভিত্তি ধরে আমরা কাজ করতে চাই। মজুতদারদের শক্ত হাতে দমন করব। কৃত্রিম সংকট যারাই করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সিন্ডিকেট থাকতে পারবে না। পুঁজিবাজারে সিন্ডিকেট করতে দিইনি, এখানেও আমি সিন্ডিকেট করতে দেবো না। স্বচ্ছভাবে যারা ব্যবসা করবে তাদের সহযোগিতা করা হবে। আর যারা কৃত্রিমভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাজার ব্যবস্থাপনায় রাশিয়া-ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে খরচ বেড়েছে উল্লেখ করে আহসানুল বলেন, এর প্রভাব আমাদের বাজারেও পড়েছে। ফলে অনেক কিছু দাম উঠানামা করছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে। আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কোনো জোর জবরদস্তি করতে চাই না। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই। উৎপাদন থেকে সরবরাহ, আমদানি থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সবখানে আমরা স্বচ্ছতা বজায় রাখতে চাই।
স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্মার্ট বাজার সিস্টেম করার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরবরাহের সময়টা কমিয়ে আনতে চাই। বাণিজ্য, অর্থ, কৃষি, খাদ্য ও শিল্প মন্ত্রণায়ের সমন্বয়ে একটি টিম থাকবে। এই টিম কোনো চিঠির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করব, এটাই হবে আমাদের মিরাকল। আর আমরা কমোডিটি এক্সচেঞ্জ স্থাপন করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করব। আগামী জুন মাসে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এটা অনুমোদন দেবে বলে আশা করছি।
সিন্ডিকেট ভাঙতে কী কাজ করবেন— জানতে চাইলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভোক্তার জন্য কাজ করছি। এর নিশ্চয়তাতেই আমার ম্যান্ডেট এসেছে। মানিকগঞ্জের ফুলকপি যেন একই দিন বা রাতে গৃহিণীর হাতে পৌঁছে যেতে পারে, সেটার নিশ্চয়তাই হবে ম্যাজিক। সঠিক সরবরাহ মূল লক্ষ্য। যে প্রস্তুতি আছে, এখন পর্যন্ত যতটুকু জানি, কোনো ঘাটতি নেই। পরিবহন ও বড় বাজার ব্যবস্থাপনা যথাযথ করাই লক্ষ্য।
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। কিছু লোক এ ধরনের কাজ করে থাকে। বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার যথেষ্ট টুলস রয়েছে। কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় কাজ করব না, জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করব।