জেলা প্রতিনিধি, ঝালকাঠি: বাবা-মাকে ভূমিহীন দেখিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকার সরকারি জমি ভোগ করছেন ভূমি অফিসের এক কর্মচারী। মো. ইলিয়াছ মিয়া ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী।
এ ঘটনায় কচুয়া গ্রামের একেএম মোস্তফা কামাল জনস্বার্থে গত ২ জানুয়ারি ঝালকাঠির সহকারী জজ আদালতে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাঁঠালিয়াসহ ৭ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, কাঁঠালিয়া পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক মো. ইলিয়াছ খান তার বাবা আবুল কালাম খান ও মা আনোয়ারা বেগমকে ভূমিহীন দেখিয়ে শৌলজালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া বাজার সংলগ্ন সরকারি খালের ভরাটকৃত অংশের ১৬ শতাংশ জমি ২০২০ সালে বন্দোবস্ত নেন। বিষয়টি দীর্ঘদিন গোপন রেখে ২০২৩ সালে ভোগ দখলে যান। তখন বিষয়টি এলাকায় জানা জানি হয়। স্থানীয় লোকজন ও কচুয়া বাজার কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক ঝালকাঠিকে এ অনিয়মের কথা অবহিত করে বন্দোবস্ত বাতিল করার অনুরোধ জানান।
জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২ জানুয়ারি বাজার কমিটির সভাপতি একেএম মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক এস এম মনিরুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য এইচ এম নাসির উদ্দিনসহ ৯ জন বাদী হয়ে মোকাম কাঁঠালিয়া সহকারী জজ আদালতে আবুল কালাম খান তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, ইলিয়াছ খান, জেলা প্রশাসক ঝালকাঠি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ঝালকাঠি, সহকারী কমিশনার ভূমি কাঁঠালিয়া ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শৌলজালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ১৬ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেন।
মামলার বাদীগণ জনস্বার্থে এ বে-আইনি বন্দোবস্ত বাতিল করে উক্তজমি বাজারের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে অবমুক্ত করার জন্য জোর দাবি জানান। কেন না, পাটিখালঘাটা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (পিওন) এর ভূমি অফিসে চাকরি করার সুবাদে তার বাবা আবুল কালাম ও মা আনোয়ারা বেগম ভূমিহীন না হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে ভূমিহীন দেখিয়ে মিথ্যা কাগজপত্র তৈরি করে ততকালীন কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কশিনার ভূমি আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীনকে ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকার এ সম্পত্তি বন্দোবস্ত নিয়েছেন।
কচুয়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ আলম জানান, কচুয়া বাজারটি অনেক পুরনো। কিন্তু সরকারি জমি না থাকার কারণে বাজারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ ইলিয়াছ মিয়া সরকারি চাকরি করে তার বাবা ধনি লোক হওয়া সত্ত্বেও বাজারের সরকারি জমি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দখল করায় আমরা ক্ষুদ্ধ। আমরা এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পাটিখালঘাটা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (পিওন) মো. ইলিয়াছ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা মায়ের কোনো জমি নেই। আমি ভূমিহীন।
এ বিষয়ে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না, তবে ঘটনা শুনেছি। ঘটনা তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাঁঠালিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ববি মিতু বলেন, মামলার বিষয়টি আমি অবগত। তবে এখন পর্যন্ত আদালতের কোনো কাগজপত্র পাইনি। পাওয়ার পরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।