চট্টগ্রাম ব্যুরো : আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছে কি না ভোটের দিন সকালে সেটা প্রার্থীর এজেন্টরা পরীক্ষা করে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা অধিকতর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের জন্য বলেছি, ব্যালেট পেপার সকালে পাঠাব। পোলিং এজেন্টরা সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে দেখে নেবেন যে, বাক্স খালি আছে কি না। ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত (কাউন্টিং ও ডিক্লারেশন) তারা ওখানে উপস্থিত থেকে দেখবেন গণনা সঠিকভাবে হয়েছে কি না।’
মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরের পিটিআই মিলনায়তনে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সিইসি একথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘ভোটের যে স্বচ্ছতা সেটা ফুটে উঠবে মিডিয়ার মাধ্যমে। কারণ মিডিয়া কর্মীরা ভোট কেন্দ্রের বাইরে থাকবেন, ভেতরে থাকবেন। তারা ভেতরে গিয়েও ছবি তুলতে পারবেন। প্রিসাইডিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে না। সরাসরি প্রবেশ করতে পারবেন। মোবাইলে ছবি নিতে পারবেন। তাৎক্ষণিকভাবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত তথ্যটা জনগণকে জানিয়ে দিতে পারবেন।’
ভোটের সময় কেউ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অনিয়ম করলে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হবে সতর্ক করেন সিইসি। বলেন, ‘ভোট গ্রহণের মাঝখানে যদি পেশিশক্তির ব্যবহার হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করতে হবে। সেসব ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে। পেশিশক্তির ব্যবহার হলে প্রশাসনকে বলে দেওয়া হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার যেন অবগত হন। রিটার্নিং অফিসারকে বলে দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন তাৎক্ষণিকভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেন। রিটার্নিং অফিসার যদি বন্ধ না করেন, আমরা অবগত হলে ঢাকা থেকেও বন্ধ করে (ভোট গ্রহণ) দিতে পারব’।
এর আগে এদিন সকালে নগরীর ষোলশহর এলাকায় অবস্থিত এলজিইডি মিলনায়তনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিইসি। এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় পিটিআই মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসাবে মতবিনিময় করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম। দুটি সভায় জেলা রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, রেঞ্জ ডিআইজি নূরে আলম মিনা, জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেওয়া নির্দেশনা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, মতবিনিময় সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঠ পর্যায় থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছে এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো। আমরা তাদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি, ভোটের শেষ দিন পর্যন্ত পরিবেশটা সুষ্ঠুভাবে ধরে রাখতে হবে। আরেকটি বার্তা দিয়েছি, ভোট গ্রহণের দিন, যেদিন ভোট গ্রহণ হবে সেইদিনের বিষয়টা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে থাকবে। ভোট অবাধ হলো কি না, এখানে কারচুপি হয়েছে কি না, সেটা নিশ্চিত করার জন্য ভোট কেন্দ্রে যাতে কোনো আনঅথোরাইজ কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেটা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ভোটের দিন অ্যাপসের মাধ্যমে প্রতি দুই ঘণ্টা অন্তর কত ভোট কাস্ট হয়েছে সেটা জানা যাবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তা জানা যাবে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ১০টার সময় দেখা গেল ১০ শতাংশ ভোট পড়ল। কিন্তু ১২টার দিকে গিয়ে হঠাৎ ৮০ শতাংশ হয়ে গেল। এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না। সকালে চট্টগ্রামের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, কিছু কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার কথা তারা বলেছেন। পোস্টার ছেঁড়াছেঁড়ি, দু-একটা নির্বাচনি ক্যাম্পে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। দু-চারটি স্থানে ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সার্বিকভাবে যারা প্রার্থী ছিলেন তারা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচনি প্রশাসনের আচরণে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
ভোট গ্রহণের দিন প্রার্থীর এজেন্টের দায়িত্ব সম্পর্কে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, প্রার্থীর পোলিং এজেন্টরা যদি ভোট গ্রহণের পূর্বে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেখে নেন ও তারপর বাক্সগুলো যদি বন্ধ করা হয় তাহলে ১০ মাস আগে গেলেও (ব্যালট পেপার) কেন্দ্রে অবৈধ ব্যালট পেপার ঢুকার সম্ভাবনা নেই। তারপরও আমরা অধিকতর আস্থা ও বিশ্বাসের জন্য ব্যালট পেপার ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে পাঠাব।
প্রার্থিতা বাতিল করা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, আমরা চট করে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারি না। আমাদের নিশ্চিত হতে হবে, অভিযুক্ত গুরুতর অসদাচরণ করেছেন কি না। সে ধরনের প্রমাণিত হলে তাহলে কমিশন প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।