নিজস্ব প্রতিবেদক: হুট করে বেড়েছে চালের দাম। বৃহস্পতিবার থেকে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। পাশাপাশি এখনো বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। ফলে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ছুটির দিন সকালে বাজারে গিয়ে অস্বস্তিতে ক্রেতারা। তারা বলছেন, সপ্তাহজুড়ে এমন অবস্থা বাজারের, এক পণ্যের দাম কমলেও আরেক পণ্যের বাড়ে।
সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমনটা। দেশে এখন আমনের ভরা মৌসুম। বাজারে নতুন ধানের চাল সরবরাহ হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই পাইকারিতে চালের দাম বেড়েছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারের চাল ব্যবসায়ী আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আবুল হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাতে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে থেকে ২ টাকা থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এরমধ্যে মোটা চালের দাম ২ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায় উঠেছে। স্বর্ণা ও পায়জাম জাতের চাল এ আমন মৌসুমে উঠলেও এসব চালের দাম বেড়েছে।
চাল-মুরগির দাম বাড়তি, বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ এখনো কম খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়তি। এর প্রভাবেই খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বাড়ায় তারা চালের দাম বাড়িয়েছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধান প্রতি মণ দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়ে গেছে।
বাজার ঘুরে মিনিকেট চাল ৭২-৭৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া প্রতিকেজি নাজিরশ্যাইল জাতের চালের দাম উঠেছে ৮০ টাকা পর্যন্ত। বেশ কয়েক সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর হুট করে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা পর্যন্ত, যা ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ছিল।
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত থেকে ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কাপ্তানবাজারে মুরগির সরবরাহ কমেছে। যে কারণে দাম বাড়ছে। তবে সোনালি মুরগি আগের দামে প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, কক প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাল-মুরগির দাম বাড়তি, বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ এখনো কম
মালিবাগ বাজারে মুরগি কিনতে এসে এক শিক্ষার্থী বলেন, মেসে আমরা অনেকটাই মুরগির মাংসের ওপর নির্ভরশীল। কিছুদিন আগেও দামটা কম ছিল, আমরাও একটু স্বস্তিতে ছিলাম। এখন দেখছি আবার দাম হুট করে বেড়ে গেছে। লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। এরপর এগারো দিন চলে গেলেও বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও পাড়া মহল্লার দোকানের অধিকাংশে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। আর খোলা সয়াবিন তেল নিয়ে এক প্রকারের নৈরাজ্য চলছে। ব্যবসায়ীরা খোলা সয়াবিন তেলের দাম ইচ্ছামতো রাখছেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ী খোলা সয়াবিন তেল ২০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করছেন।
আবার বোতলজাত তেলও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বোতলের সয়াবিন তেল বাজারে ছাড়ে তারা সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। দাম বাড়ানোর পরও তারা তেল সরবরাহ করছে না। এত আগে বাজারে হঠাৎ করে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই দাম বাড়ানোর ফলে এখন বোতলের এক লিটার সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৭৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৫৭ টাকা। তবে এ দামে হাতেগোনা কিছু বড় বড় দোকান ছাড়া তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বেশিরভাগ দোকানেই বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। দু-একটি দোকানে সীমিত পরিসরে বোতলজাত সয়াবিন তেল থাকলেও দাম রাখা হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা পর্যন্ত।
খিলগাঁও বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আমির খসরু বলেন, কোম্পানির তেল দেওয়ার কথা বললে আটা ময়দা ডাল নেওয়ার বাধ্যতামূলক শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। তাছাড়া তেল দিচ্ছে না। আবার অন্যান্য যেসব পণ্য নিতে বাধ্য করছে সেগুলোরও দাম ধরছে বেশি। ব্যবসায়ীদের একরকম জিম্মি করা হয়েছে।
এদিকে, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পরিবেশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত দু-একটি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানি নতুন দামের সয়াবিন তেলের বোতলজাত তেল বাজারে ছাড়েনি। এ জন্য তারাও খুচরা পর্যায়ে পণ্যটি দিতে পারছেন না। দীর্ঘদিন অস্থিতিশীল থাকা পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। পেঁয়াজের দর বেশ কমেছে। এক-দেড় মাস আগে দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এখন এর অর্ধেক দামেও পেঁয়াজ কিনতে পারা যাচ্ছে।
এছাড়া দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজের কেজিতে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
দাম কমেছে আলুরও। নতুন আলুর দাম ১২০ টাকা থেকে কমে ৬০ টাকায় নেমে এসেছে। এ ধরনের নতুন আলুর আধিক্যের কারণে পুরোনো আলুর দামও কেজি প্রতি ১০ টাকার কমে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। ফলে কমতে শুরু করেছে সব ধরনের সবজির দর। গড়ে সবজির কেজি কেনা যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। তাছাড়া ডিমের দামও স্থিতিশীল রয়েছে। ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা প্রতি ডজন।