নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো: সেলিম উদ্দিন বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং প্রায় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটঘোষণা করা হয়েছে। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এ বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে ৮২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি এবং কাঙ্খিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫ ও ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এ বাজেটে বাড়ানো হয়েছে পরিচালন আবর্তন ব্যয় এবং মোট উন্নয়ন ব্যয়ের আকারও। এক্ষেত্রে পরিচালন আবর্তন ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে যা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পক্ষান্তরে, মোট উন্নয়ন ব্যয় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এনবিআর বহির্ভূত কর ও অন্যান্য প্রাপ্তিগুলো পূর্ববর্তী বছর থেকে টাকার অংকে যথাক্রমে পাঁচ হাজার ও চার হাজার কোটি টাকা হ্রাস করে একে আরো বেশি বাস্তবসম্মত করা হয়েছে।
বাজেট ঘাটতি হ্রাসকল্পে গত বছর থেকে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে যা ইতিবাচক। প্রাক্কলিত ঘাটতির ৩৭ দশমিক ১৫ শতাংশ বহি.উৎস এবং ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎস হতে মেটানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা সত্ত্বেও বহি.উৎস অর্থায়ন বিদায়ী অর্থবছর থেকে ২৫ শতাংশ কমিয়ে এ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, তারল্য সঙ্কট এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মতো পরিস্থিতি রোধ করে বাজেট বাস্তবায়নে সফলতা দেখাতে বিভিন্ন কলা-কৌশলসহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা অতীতের যেকোনো সময় থেকে বেশি নিতে হবে।
মোট বাজেট ব্যয় প্রাক্কলনে বিশেষত দেখা যায়, সামাজিক অবকাঠামো এবং সাধারণ সেবা খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। পক্ষান্তরে, ভৌত অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ সামান্য কমেছে। প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ের সাধারণ করদাতার করমুক্ত আয় সীমা অপরিবর্তিত রেখে উচ্চবিত্তদের করহার বাড়িয়ে আয় বৈষম্য হ্রাসের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। কোম্পানির কর হারের ক্ষেত্রেও যৌক্তিক আকার প্রদানের প্রয়াস প্রশংসার দাবিদার।
চলমান বৈশি^ক সঙ্কটের কারণে বর্তমান অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, অর্থনীতে কার্যকর চাহিদা সৃষ্টি ছাড়াও বেসরকারি খাতের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল রাখার স্বার্থে স্থানিয় শিল্পকে সুরক্ষা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহনীয় রাখার স্বার্থে এই বাজেটে- ১৯ টি পণ্যের সাপ্লিমেন্টরি ডিউটি প্রত্যাহার, ১৭২ টি পণ্যের সাপ্লিমেন্টরি ডিউটি হ্রাস এবং ৯১ টি পণ্যের রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে যেটি জনজীবনে স্বস্থি দিবে ও জীবন যাত্রা ব্যয় হ্রাসসহ দেশীয় শিল্প সুরক্ষা পাবে।
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তথা আইসিটি সেক্টর গুলোতে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার এবং সুরক্ষার জন্য কর সুবিধা ও কর অব্যাহতিসহ বিভিন্ন প্রণোদনা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান আকৃষ্ট করবে।