অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক: ‘গ্যাসের সংকটে কারখানা প্রায়ই বন্ধ রয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
আজ সোনারগাঁও হোটেলে ১৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস মেশিনারি প্রদর্শনী উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘ভারাক্রান্ত ও দুঃখের সঙ্গে বলছি, আমরা (ব্যবসায়ীরা) ভাল নেই। ‘গ্যাস নেই ও বিদ্যাৎ নেই এবং ডলার নেই। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চলছে পোশাক কারখানাগুলো। গ্যাসের অভাবে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাসের সংকটের কারনে অনেকেই কারখানা বিক্রি করে দিতে চাচ্ছেন । বর্তমানে এই সেক্টর খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘২০২২ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন সরকার বলছিলো ব্যবসায়ীদের পুরোদমে গ্যাস দেয়া হবে। কিন্তু আমরা গ্যাস পায়নি। তাই সরকারের কাছে দাবি থাকবে যেহেতু আমরা গ্যাস পায়নি তাই আগের দামে গ্যাসের দাম ধরা হোক। না হলে এ সেক্টরে ধস নেমে যাবে। এতে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে যাবে। এছাড়া সরকার বড় ধরনের রাজস্ব হারাবে। সরকার গ্যাস দিক না হয়ে গ্যাসের দাম কমানো হোক।’
মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বর্তমানে এ সেক্টরের অবস্থা ভালো । তারপরও এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। কারণ মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের টেক্সটাইল ও ক্লথিং ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল টেকনোলজির সাথে পরিচিত করানো এবং ক্ষেত্র বিশেষে বাংলাদেশে বসেই এই দুটি খাতে উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি তাদের ইন্ডাস্ট্রিতে সংযোজন ও সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘এ প্রদর্শণীটির আয়োজনের আরো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাইমারী টেক্সটাইল খাতের সামগ্রিক বিষয় ও ইতোমধ্যে এখাতে অর্জিত সাফল্য সরকারের নীতি নির্ধারকদের নিকট তুলে ধরা। টেক্সটাইল ও ক্লথিং থেকে বিগত দুই দশকেরও বেশী সময় যাবৎ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে জনশক্তি খাতের পর টেক্সটাইল খাতের অবদানই মূখ্য। বর্তমানে আমাদের স্পিনিং মিলগুলির বার্ষিক সুতা উৎপাদন ক্ষমতা ৪০০০ মিলিয়ন কেজি। এছাড়াও দেশে প্রায় ছোট, মাঝারি ও বড় ওভেন ফেব্রিকের মিল রয়েছে প্রায় ২০ হাজারের মত যাদের বার্ষিক ফেব্রিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯ বিলিয়ন মিটার ফেব্রিক। অন্যদিকে দেশে ২৫ টির মত হোম টেক্সটাইল মিল রয়েছে যাদের বর্ষিক হোম টেক্সটাইল সামগ্রী উৎপাদন ক্ষমতা ৮০০ মিশিএন মিটার এবং ডেনিম মিলের সংখ্যা ৪২ টি যাদের উৎপাদন ক্ষমতা ৯০০ মিলিয়ন মিটার। এ খাতে বর্তমানে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। এরই প্রেক্ষিতে এখাত দেশের রপ্তানিমুখী তৈরী পোশাক শিল্পের সুতা ও কাপড়ের সিংহভাগ সরবরাহ করছে। পাশাপাশিভাবে দেশের প্রায় ১৭ কোটি লোকের বন্ত্রের মৌলিক চাহিদা সম্পূর্ণ অংশই পূরণে সক্ষম।
তিনি বলেন, ‘এখাতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আমাদের মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৫.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তন্মধ্যে তৈরী পোশাক ও ক্লথিং থেকে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৪৮.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ মোট রপ্তানির আয়ের ৮৬.৬ শতাংশ এসেছে টেক্সটাইল ও কৃষি খাত থেকে।’
তিনি আর বলেন, ‘তীব্র ডলার ও জ্বালানী সংকটের প্রেক্ষিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাবে বাংলাদেশ অর্থাৎ আমরা যারা আগামী ২০২৬ সনে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত যতে যাচ্ছি তারাই সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবো। এতদসত্ত্বেও আমাদের টেক্সটাইল ও রুবিং সেক্টর এ দুটি খাত যতটুকু সম্ভব পরিবর্তনশীল টেকনোলজির সম্বন্বয় করে নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে লিপ্ত। কিন্তু তীব্র ডলার ও গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে তা অনেকটাই বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ’
মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘বাংলাদেশে টেক্সটাইল এবং তৈরি পোশাক খাতে রিসাইকেল ফাইবারের ব্যাপক ব্যবহারের বিষয়টি বেশ কয়েক বছর যাবৎ গুরুত্বের সাথে আলোচনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমাদের দেশে ছোট বড় প্রায় ৪০টির মত রিসাইকেল ফাইবার ফ্যাক্টরী স্থাপিত হয়েছে যারা গার্মেন্ট ফ্রুট ও টেক্সটাইলের ওয়েস্ট যারা তুলা তৈরি করে যা পরবর্তীতে সূতা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গার্মেন্টস ফুট ও টেক্সটাইলের ওয়েস্ট রপ্তানি কিংবা পাচার এবং উক্ত ফাইবারগুলোর উপর প্রায় ২২ শতাংশ শুল্ক ও কর ধার্য থাকায় অপ্রতিযোগী হয়ে পড়ছে। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রায় ৯টির মত মিল রয়েছে যারা বিভিন্ন প্লাষ্টিক পণাকে রিসাইকেল করে ফাইবার তৈরি করছে যা টেক্সটাইলের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’
তিনি বলেন,‘আমাদের উদ্যোক্তাগণের আগ্রহ ও সাহসের কোন অভাব নেই। বর্তমানে যে বিষয়গুলি আমাদের বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে তার কারণ হচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষিতে, বিশ্বের সাপ্লাই-চেইনের বিপর্যন্ত অবস্থা, জ্বালানীর তীব্র সংকট ও ডলারের অভাব। সরকার নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত সরবরাহ ব্যবস্থার কোন উন্নতি হয়েছে বলে আমরা জানিনা। ’
সভাপতি আরও বলেন, ‘আমি এখন গ্যাস সংকটে এখাতের বিদ্যমান অবস্থা তুলে ধরছি- বিগত ১ মাস বেশি সময় যাবত চট্টগ্রাম, সাভারসহ সাভারের আশুলিয়া, গাজীপুর, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত টেক্সটাইল মিলগুলিতে সরবরাহকৃত গ্যাসের গড় পিএসএফ “০”-২ এর মধ্যে। শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জের বিসিক এবং তার আশে পাশের এলাকায় গত ১৫ দিন যাবত গ্যাস বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় মিলগুলির উৎপাদন শূন্যের কোঠায়। মাঝে মধ্যে গ্যাস গ্যাসের সরবরাহ থাকলেও চাপের উঠানামার কারণে মিলের যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। এর কারণে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে প্রয়োজনীয় সুতা ও কাপড় সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। গ্যাস না থাকা সত্ত্বেও মিলগুলিকে ন্যূনতম গ্যাস বিল বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে বয়লার চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় ফেব্রিক প্রসেসিং বন্ধ রয়েছে। মিল বন্ধ থাকায় উৎপাদন না করতে পারার জন্য সময়মত প্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদানে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে যা আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।’
তিনদিন ব্যাপী ১৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস মেশিনারি প্রদর্শনী আগামী ১ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে। প্রদর্নী দুপুর ১২ টায় শুরু হয়ে রাত্র ৮টা পর্যন্ত চলবে। এসময় সংগঠনের সহসভাপতি ফায়জুর রহমান ভূঁইয়া ও সালেউদ জামান খাঁন উপস্থিত ছিলেন।