রমজান আলী: বৈশ্বিক এবং অভ্যন্তরীন নানা সমস্যার কারণে সংকটে থাকা অর্থনীতি সামলানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দুই নতুন মন্ত্রীকে। একজন মন্ত্রীত্বে নতুন নয়, তবে এই দায়িত্বে নতুন। আরেকজন মন্ত্রীত্বে এই প্রথম, কনিষ্ঠ (প্রতি) মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর আব্দুর রউফ তালুকদার নিজেই বলেছেন যে, ‘এতো খারাপ অর্থনীতি’ তিনি আগে কখনো দেখেননি।
আর এই সময়ে যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের একজন হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অন্যজন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
এই নিয়োগ কিভাবে দেখছেন ব্যাবসায়ীরা, কী প্রত্যাশা তাদের নতুন মন্ত্রীদের কাছে — ব্যাবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সংঙ্গে কথা বলেছে সকলের সংবাদ।
ব্যবসায়ীদের র্শীষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম গতকাল সকলের সংবাদকে বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) অর্থমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে। তিনি নিজেই বলেছেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়েই এক সাথে দেশের অর্থনীতি উন্নয়নে কাজ করবেন। তাই মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে হলে আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা, গতিশীলতা ও আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষে কাজ করতে হবে।‘
নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাতে সংস্কার করতে হবে। দেশের অর্থনীতি ভালো রাখতে হলে ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বর্তমানে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান গ্যাসের সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। তাই দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে হলে গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের গ্যাস দিতে হবে।’
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহসভাপতি সালেউদ জামান খাঁন বলেন, ‘দেশের সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। ব্যবসায়ীরা এলসি (আমদানির ঋণপত্র) খুলতে পারছেনা। গ্যাসের সংকটে পোশাক উৎপাদন বন্ধ প্রায়। তাই নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা থাকবে এগুলো যাতে ব্যবসায়ীরা পায়। এছাড়া ব্যাংকখাতে যাতে সহজে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ঋণ পায়।’
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি সামীর সাত্তার বলেন, ‘দেশে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং মূল্যস্ফীতি কমাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের পাশাপাশি এর সাশ্রয়ী মূল্য নির্ধারণ জরুরি।’
কোথা থেকে এলেন নতুন দুই মন্ত্রী
নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মূলত একজন পেশাদার কূটনীতিক। তবে তার লেখাপড়া অর্থনীতিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ১৯৬২ সালে বি.এ এবং ১৯৬৩ সালে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত অর্থনীতির প্রভাষক ছিলেন। তারপর ১৯৬৬ সালে মাহমুদ আলী পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে তিনি দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
অবসর গ্রহণের পর মাহমুদ আলী ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। একসময় তিনি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে নবগঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মাহমুদ আলী, ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ভোটের আগে নির্বাচনকালীন সরকারে মাহমুদ আলীকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নতুন মেয়াদে মন্ত্রিত্ব না পেলেও অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান মাহমুদ আলী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া আহসানুল ইসলাম টিটু এবার দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য হলেন। মূলত ব্যাবসায়ী টিটুর মূল ক্ষেত্র পুঁজিবাজার বা শেয়ারবাজার। তিনি ২০১৩-১৪ মেয়াদে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাবা মকবুল হোসেন ঢাকা-৯ আসন থেকে ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক।