চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : নিজের অনুসারীদের আটক করলে পুলিশ সদস্যের হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। একইসঙ্গে বিতর্কিত চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হকের ‘গায়ে হাত না দেওয়ার’ নির্দেশ দেন তিনি।
এমপির এসব কথার জবাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা যায় বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদকে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে এমপি মোস্তাফিজের কথোপকথনের অডিওটি গতকাল বৃহস্পতিবারের বলে জানা গেছে।
যেটি শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই অডিওটি পাঠকদের জন্য হুবহু দেওয়া হলো: এমপি মোস্তাফিজ: আপনি কি বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছেন? ওসি তোফোয়েল: স্যার কোথায়, স্যার? এমপি মোস্তাফিজ: ছনুয়া (বাঁশখালী), পুলিশের হাফিজ গেছে… ওসি তোফোয়েল: নানা, স্যার ও-তো এখন নেই। ও থাকে ২টা পর্যন্ত। ও-তো চলে আসছে স্যার। এমপি মোস্তাফিজ: কী জন্য গেছে ওসি তোফোয়েল: ওইটা-তো আমাদের নিয়মিত ডিউটি করার জন্য, প্রত্যেক বিটে বিটে একটা করে.. এমপি মোস্তাফিজ: আমার কোনো লোককে যদি হাত দেয়…হাত কেটে ফেলবো কিন্তু। এটি বলে দিলাম.. ওসি তোফোয়েল: হাত দিবে না স্যার, দিবে না স্যার। আমি এখনই বলে দিচ্ছি। এমপি মোস্তাফিজ: ওইখানে নাকি আমাদের লোক ধরার জন্য হাফিজ গেছে..। আমাদের আলমগীর একটা আছে ওনাকে খুঁজতেছে। ওসি তোফায়েল: ও-তো নাই স্যার। চলে আসছে-তো স্যার অনেক আগে। এমপি মোস্তাফিজ: এমনি ঘুরেফিরে থাক। অসুবিধা নেই। আমার কোনো লোকজনের ওপর হাত দিলে, বহুত অসুবিধা হবে। ওসি তোফায়েল: অবশ্যই স্যার। আপনি যেভাবে বলবেন ওইভাবে হবে। প্রশ্নই আসেনা হাত দিবে না স্যার। এমপি মোস্তাফিজ: আপনি-তো আমার ঘরেও পুলিশ পাঠিয়েছেন। ওসি তোফায়েল: ওইদিন-তো স্যার আপনার সঙ্গে কথা বললাম। পুলিশ পাঠাইনি স্যার। ওই..ওরা আপনার বাড়িতে এমনি নিয়মিত টহল দিতে গেছে। তাও সাদা পোশাকে যাতে, কেউ চিনতে না পারে। বিষয়টি স্যার আপনাকে ডিটেইলস বলছি। আরও আমি আপনার সম্মান বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেছি। সাদা পোশাকে পুলিশ পাঠিয়েছি। কাউকে ধরার জন্য যায়নি স্যার। এমপি মোস্তাফিজ: চাম্বলের মুজিবের (চেয়ারম্যান মুজিবুল হক) ওপরও যেন কোনোকিছু না হয়। ওসি তোফায়েল: হবে না স্যার, হবে না। ইনশাআল্লাহ..
অডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
অডিওর বিষয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ বলেন, বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে। মূল বিষয়টা জানতে দুইটি ফোনের মোবাইল নম্বরটা নিচ্ছি। উনার মোবাইল নম্বর থেকে কথা হয়েছে, না অন্য কোনো মোবাইল নম্বর থেকে কথা হয়েছে। উনি করছে সেটা ঠিক। যাচাই-বাছাই করে আইন ও বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন সকলের জন্য সমান।
বাঁশখালী সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদনকের পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে পুনরায় চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এর আগে তিনি সাংবাদিকদের মারধর করে আলোচনায় এসেছিলেন। তারও আগে মিছিলে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করে সমালোচনার জন্ম দেন। বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) মাঠে নির্বাচনী জনসভায় জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল মোস্তফা চৌধুরীকেও হুমকি দেন মোস্তাফিজ। আচরণবিধি লঙ্ঘন ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের পেটানোর অভিযোগে গত ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হারুন মোল্লা বাদী হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলাও করেন। মামলায় আদালত সমন দিলে গত ৩ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। এ ছাড়া গত ২২ ডিসেম্বর এমপি মোস্তাফিজ বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমদকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন। এই অপরাধে বাঁশখালী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। সেটির তদন্তও চলছে।