নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করতে অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ। গত শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ এই
সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তৈরি পোশাকশিল্পে একটি সুষ্ঠু উৎপাদন পরিবেশ বজায় থাকা দরকার, যা প্রকারান্তরে আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এ অবস্থায় দেশ ও অর্থনীতির স্বার্থে তৈরি পোশাকশিল্পকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করতে অনুরোধ করছি।’
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশের মতো আসে এই খাত থেকে। নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। বিদায়ী ২০২৩ সালের প্রথম ১১ মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি-নভেম্বর সময়ে ৪২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। ২০২১ সালে এই অঙ্ক ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘গত অক্টোবর-নভেম্বরে ন্যূনতম মজুরি আলোচনাকে কেন্দ্র করে কিছু এলাকায় শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছিল। তখন কারখানা কর্তৃপক্ষ ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’ ভিত্তিতে কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। তবে মানবিক দিক বিবেচনায় এবং আমাদের শ্রমিকদের কল্যাণে বিজিএমইএর অনুরোধে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পূর্ণ মজুরি পরিশোধ করে। এত কিছুর পর শিল্পে যখন স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, তখন ধর্মঘটের নামে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না।’
পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ সাত দফা দাবি আদায়ে তৈরি পোশাকশিল্পে ১ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের শ্রমিক ধর্মঘটের আহ্বান করেছিল সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি)। মূলত এই ধর্মঘটের কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে ফারুক হাসান এসব কথা বলেছেন। যদিও শুক্রবার সকালেই এসএসপি সংবাদ সম্মেলনে তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছে।
ফারুক হাসান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের শ্রমিক ভাই–বোনেরা সার্বিক বিষয়ে অবগত রয়েছেন, তারা তাদের জীবিকার প্রধান উৎসটি কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেবেন না। আমি আমাদের প্রত্যেক শ্রমিক ভাই-বোনকে অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা কোনো ধরনের প্ররোচনা ও অপচেষ্টায় নিজেদের সম্পৃক্ত করবেন না।’
এদিকে সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদ (এসএসপি) তৈরি পোশাকশিল্পে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের যে শ্রমিক ধর্মঘট কর্মসূচি ডেকেছিল, তা স্থগিত করেছে। পোশাকশ্রমিকদের নি¤œতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ ও মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনার বিচারসহ সাত দফা দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল এসএসপি।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজায় এসএসপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক এ এ এম ফয়েজ হোসেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এসএসপির নির্বাহী সমন্বয়ক আবদুর রহমান, সমন্বয়ক হারুন অর রশিদ, মোশাররফ হোসেন, বাচ্চু ভূঁইয়া, মীর মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে ফয়েজ হোসেন বলেন, ‘দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে অনিবার্য কারণে ১ জানুয়ারি থেকে ঘোষিত ধর্মঘট কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। ধর্মঘটের পরবর্তী সময়সূচি পরে জানানো হবে। আমরা আশা করছি, ধর্মঘট শুরুর আগেই সরকার ও মালিকদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া হবে।’
গত ১ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক সমাবেশে সাত দফা দাবি উত্থাপন করে এসএসপি। সেগুলো হচ্ছে—মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক নিহতের ঘটনার বিচার, নিহতদের এক জীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ, পোশাকশ্রমিকদের জন্য ঘোষিত মজুরি বাতিল করে তা ২৫ হাজার টাকায় নির্ধারণ, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, ইপিজেডসহ সর্বত্র ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া ইত্যাদি।
এসএসপির শ্রমিক ধর্মঘটের কর্মসূচির বিষয়টি গত ২৩ ডিসেম্বর নতুন করে আলোচনায় আসে। সেদিন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এসএসপির উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ এ এম ফয়েজ হোসেন বলেন, শ্রমিকদের দাবি পূরণ না হলে ১ জানুয়ারি থেকে পোশাকশিল্পে শ্রমিক ধর্মঘট পালন করবেন তারা।
ওই আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।