নিজস্ব বার্তা পরিবেশক: দেশের অর্ধশতাধিক কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এইচএসি পরীক্ষা বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। তবে এসব পরিক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহন করবে না বলে জানিয়েছে।
জানাযায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সহিংস পরিস্থিতির কারণে স্থগিত হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার নতুন সময়সূচি গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনার বিচার এবং গ্রেপ্তার সহপাঠীদের মুক্তির দাবিতে চলমান এইচএসসির অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলোয় না বসার ঘোষণা দিয়েছেন দেশের অর্ধশতাধিক কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। চলতি বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি বোর্ড ও মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে গত ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। তৃতীয় দফায় ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সূচি অনুযায়ী যত পরীক্ষা ছিল, সব স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। সর্বশেষ দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৪ আগস্ট পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
নতুন সূচি অনুযায়ী, আগামী ১১ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে ভূগোল দ্বিতীয় পত্র এবং দুপুর ২টা থেকে উচ্চাঙ্গ সংগীত দ্বিতীয় পত্র, আরবি দ্বিতীয় পত্র ও পালি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা হবে। ১২ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে হবে রসায়ন দ্বিতীয় পত্র, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি প্রথম পত্র (মানবিক শাখা), ইতিহাস প্রথম পত্র, গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন প্রথম পত্র এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন প্রথম পত্র পরীক্ষা। ১৪ আগস্ট সকালে রসায়ন দ্বিতীয় পত্র, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র (মানবিক শাখা), ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র, গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন দ্বিতীয় পত্র এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা নেওয়া হবে। ১৮ আগস্ট সকালে হবে অর্থনীতি প্রথম পত্র এবং ২০ আগস্ট অর্থনীতি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা। ১৮ আগস্টের প্রকৌশল অঙ্কন ও ওয়ার্কশপ প্র্যাকটিস প্রথম পত্রের পরীক্ষা পরীক্ষার্থীদের নিজ নিজ কলেজে হবে সকাল ৯টায়। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বোর্ডগুলোকে।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে হতাহতের ঘটনার বিচার এবং গ্রেপ্তার সহপাঠীদের মুক্তির দাবিতে চলমান এইচএসসির অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলোয় না বসার ঘোষণা দিয়েছে দেশের অর্ধশতাধিক কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তারা বলছে, একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থীও যদি কারারুদ্ধ থাকে, তাহলে তারা পরীক্ষায় বসবে না। গত বুধবার থেকে কলেজগুলোর ২০২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত একাধিক বিবৃতি পাঠানো হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা নিজেদের ফেসবুক আইডি, গ্রুপ ও পেজে তা শেয়ার করে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে নটর ডেম কলেজ, ঢাকা কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাকলিয়া সরকারি কলেজ চট্টগ্রাম, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি মডেল কলেজ, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ সিলেট, বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজ রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, বাগেরহাটের ফকিরহাট কাজি আজহার আলী কলেজের শিক্ষার্থীরা রয়েছে। মাদ্রাসার মধ্যে রয়েছে– দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা চট্টগ্রাম, দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসা, টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা লক্ষ্মীপুর।
বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা জানায়, কলেজের প্রতিটি গ্রুপের ক্যাপ্টেন এবং শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পরীক্ষা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী বন্ধুদের কারাগারে রেখে তারা পরীক্ষায় বসতে পারে না। এ আন্দোলনে তাদের সমর্থন রয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে স্থগিত হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার নতুন সময়সূচি গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে আগামী ১১ আগস্ট থেকে রাখা হয়েছে পরীক্ষার সূচি।