নিজস্ব প্রতিবেদক: অগভীর সাগরে ৯টি এবং গভীর সমুদ্রে ১৫টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ।
সমুদ্রের যে ২৪টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য এই দরপত্র ডাকা হয়েছে তাতে এখন পর্যন্ত সাতটি বৈশ্বিক কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে।
তবে ‘অফশোর বিডিং রাউন্ড-২০২৪’ উপলক্ষে বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি খাতের কোম্পানি পেট্রোবাংলা যে সেমিনারের আয়োজন করে, তাতে অংশ নেয় ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৪০ জন প্রতিনিধি।
ঢাকার একটি হোটেলে একটি প্রচারণামূলক সেমিনারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, “সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিডিং প্রসেস শেষ হবে। আমরা চাচ্ছি, এই বছর নাগাদ সময় নেব। সামনের বছর নাগাদ ব্লক দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান নিয়ে ঢাকায় পেট্রোবাংলা আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা
গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান নিয়ে ঢাকায় পেট্রোবাংলা আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা
গত ১০ মার্চ নতুন মডেল পিএসসি অনুমোদনের পর বঙ্গোপসাগরের অগভীর সমুদ্রে নয়টি এবং গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকে পেট্রোবাংলা।
এতে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার মধ্যে নির্ধারিত ঠিকানায় দরপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে এক ঘণ্টা পর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সামনে দরপত্র উন্মুক্ত করা হবে।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আজকের অনুষ্ঠানই প্রমাণ করে যে, মানুষের কতখানি আগ্রহ আছে। বিশ্বের ৭টি বৃহৎ এক্সফ্লোরেশন কোম্পানি আমাদের বিড ডকুমেন্ট কিনেছে। মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভে কিনেছে। ১৫টির অধিক কোম্পানি আজকের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে।”
বাংলাদেশের জ্বালানির ইতিহাসে একটা যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখানে জ্বালানির বড় একটা বাজার রয়েছে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে। এটা হবে দেশের সবচেয়ে আধুনিক একটা পিএসসি চুক্তি। দেশের স্বার্থ, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ দেখে এটা করা হয়েছে।”
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশের জ্বালানির ইতিহাসে একটা যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশের জ্বালানির ইতিহাসে একটা যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে
কবে নাগাদ এই কাজ শেষ হবে প্রশ্ন করা হলে প্রতিমন্ত্রী সামনের বছরের মধ্যে ব্লক দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা বলছে জানিয়ে বলেন, “অনশোরেও বিডিং শুরু হবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে গ্যাস আহরণ করতে ছয় থেকে সাত বছর সময় লেগে যেতে পারে।”
সেমিনারে অংশ নেওয়া ঠিকাদার কোম্পানিগুলো মধ্যে ছিল পেট্রোনাস, এক্সনমবিল, শেভরন, ইনপেক্স করপোরেশন, জগমেক জাপান, ক্রিস এনার্জি, ওএনজিসি, চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল করপোরেশন ও ইতালিয়ান কোম্পানি ইএনআই।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি টিজিএস-স্লামবার্জার তাদের মাল্টি ক্লায়েন্টে সার্ভের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে তেল-গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে কাজ করা মর্কিন কোম্পানি শেভরনের পক্ষে থেকেওও এই অঞ্চলে কূপ খনন ও ব্যবসা পরিচালনায় তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে সর্বশেষ পিএসসির বিস্তারিত তুলে ধরেন পেট্রোবাংলার অনুসন্ধান শাখার মহাব্যবস্থাপক ফারহানা শাওন।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, তিনি মনে করেন জ্বালানি অনুসন্ধানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বেশ লাভজনক।
তিনি বলেন, “বঙ্গোপসাগর হচ্ছে এমন একটি জলভাগ যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদ এখনও উত্তোলন করা হয়নি। বাংলাদেশ, ভারতসহ এই অঞ্চলে জীবাশ্ম জ্বালানির একটা বড় বাজার রয়েছে। বাংলাদেশেরই আগামী দিনে প্রচুর তেল-গ্যাস প্রয়োজন। বিশ্বের যুদ্ধ বিগ্রহপূর্ণ অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এটা হচ্ছে তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ। এসব কারণে এটা হবে বিনিয়োগকারীদের জন্য বেটার অপপরচুনিটি ফর ইনভেস্টমেন্ট। বাংলায় এটাকে বলা হয় মণিকাঞ্চানযোগ।”
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী মনে করেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ব্যাপক লাভজনক
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী মনে করেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ব্যাপক লাভজনক
এবারের পিএসসিতে দাম নির্ধারণের সূত্রটি ব্রেন্ড অয়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা নতুন করে আর ফ্যাক্টর যুক্ত করেছি। এর অর্থ হচ্ছে, লাভ যত বেশি হবে সেখান থেকে আনুপাতিক হারে দুই পক্ষই ভাগ পাবে।”
এই অঞ্চলকে একটি অপেক্ষাকৃত শান্ত অঞ্চল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়া অপেক্ষাকৃত শান্ত। বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করলে বুঝতে পারবে, পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় তারা যে বিনিয়োগ করেছে তার চেয়ে এখানে অনেক বেশি ঝুঁকিমুক্ত। আশপাশের দেশগুলোতে জ্বালানির প্রচুর চাহিদা থাকায় তাদের সাপ্লাই চেইন রিস্কও থাকবে না।“
মিয়ানমার পরিস্থিতি কোনো প্রভাব ফেলবে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ চাপ আছে, আন্তর্জাতিক চাপ আছে। আর মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে ভালো। সুতরাং বাস্তবতা চিন্তা করে সবাই মিলে একটা শান্ত বঙ্গোপসাগর গড়ে তুলতে পারব।
“মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে আমাদের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। আর যদি আমাদের যুদ্ধ বিগ্রহ করাই লক্ষ্য হয়ে থাকে সেটা তো অন্য কথা।”
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান, জ্বালানি সচিব নুরুল আলম, পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারও সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।