অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক: ডলারের অফিসিয়াল দাম ১১০ থেকে ১১৭ টাকায় উন্নীত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ দাম ঘোষণা করেছে সংস্থাটি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এখন থেকে ‘ক্রলিং পেগ’ নামের নতুন পদ্ধতিতে ডলার কেনাবেচা হবে। এ পদ্ধতিতে ডলারের মধ্যম রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দাম ছিল ১১০ টাকা। যা ছিল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাফেদা নির্ধারিত ডলার রেট।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এর পরামর্শ মেনে এখন থেকে এ পদ্ধতিতেই ডলারের দর নির্ধারিত হবে।
গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় দর ব্যাংক খাতে ছিল সর্বোচ্চ ১১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন তারা ব্যাংক থেকে আমদানি পর্যায়ে ডলার কিনতে ব্যয় হচ্ছে ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা। আর কার্ডে ব্যাংক থেকে ডলারের দর ১১৪ টাকা। খোলা বাজারে যা চলছে ১১৮ টাকা।
গত ৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ করে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি প্রয়োগ করবে।
তিনি জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য একটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ব্যবস্থা প্রণয়নে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকারদের সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
‘ক্রলিং পেগ’ হলো বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি, যেখানে একটি নির্দিষ্ট বিনিময় হারের সঙ্গে একটি মুদ্রাকে হারের একটি ব্যান্ডের মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। পদ্ধতিটি সম্পূর্ণরূপে স্থির বিনিময় শাসনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি ভাসমান বিনিময় হার শাসনের নমনীয়তা ব্যবহার করে।
এখন থেকে ‘ক্রলিং পেগ’ নামে নতুন পদ্ধতিতে ডলার কেনা-বেচা হবে। এ পদ্ধতিতে ‘ক্রলিং পেগ মিড-রেট’ (সিপিএমআর) মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা। এর সঙ্গে ১ টাকা যোগ কিংবা এক টাকা বিয়োগ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। এর মানে ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ১১৮ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলার নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে কেনা-বেচা হবে। নতুন পদ্ধতিতে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ডলারের দাম একটা সীমার মধ্যে বাড়বে বা কমবে। এ পদ্ধতিতে চাইলেও ডলারের দাম একবারে অনেক বেশি বাড়তে বা কমতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা নির্ধারণ না করে মধ্যবর্তী সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ডলার লেনদেনের ক্ষেত্রে এ দরের আশপাশে থাকতে বলা হয়েছে।
এতদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমদানি ও রপ্তানি থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকের কাছে কত দরে ডলার কেনা-বেচা করা হবে, তা ঠিক করত বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। এখন থেকে ডলারের দাম নির্ধারণে বাফেদা বা এবিবির কার্যত কোনো ভূমিকা থাকবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কীভাবে এ পদ্ধতি চালু হবে, তা নিয়ে আইএমএফের শরণাপন্ন হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মার্চের মধ্যে এ পদ্ধতি চালু করার কথা বলা হলেও মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত ঘোষণা দিলো। আইএমএফের একটি দল এখন বাংলাদেশ সফর করছে।
এদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত ডলারের দাম ছিল ১১০ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বেধে রাখায় খোলাবাজার অর্থাৎ কার্ব মার্কেটে এক ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৮ টাকা থেকে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সায়। নতুন পদ্ধতির কারণে এখন ডলারের দাম এক লাফে ১২৪ থেকে ১২৫ টাকা উঠে যাবে বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। এসময় কিছু নীতি সংস্কারসহ বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় কিস্তিতে ৭০ কোটি ডলার পাওয়ার কথা আগামী মাসে। তার আগে পর্যালোচনা বৈঠক করতে ঢাকায় আসা আইএমএফের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগ এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করেছে।