নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নতুন জামার পাশাপাশি সালামি হিসেবে নতুন টাকা পেলে শিশুদের আনন্দ আর ধরে না। তাই প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষ্যে গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদার কথা বিবেচনায় বাজারে নতুন টাকা ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এ বছর মাত্র ১০৬ কোটি টাকার নতুন নোট ছেড়েছে। যেখানে আগের বছরের ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা ছেড়েছিলো আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
ব্যাংকগুলোতে নতুন টাকার সরবরাহ কম হওয়ায় চাহিদা মিটছে না গ্রাহকদের। এ জন্য বাধ্য হয়ে অস্থায়ী দোকানে যেতে হচ্ছে নতুন টাকার খোঁজে। রাজধানীর বাংলাদেশ ব্যাংকের পার্শ্ববর্তী সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে ও গুলিস্তানে অস্থায়ী টাকার দোকানে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
রবিবার (৭ এপ্রিল) মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকা সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চাহিদা-সরবরাহ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সারা বছর বাজারে নতুন নোট সরবরাহ করে। তবে ঈদের আগে নোটের চাহিদা বেশি থাকে। সেই বিবেচনায় ঈদ উপলক্ষে এবার মাত্র ১০৬ কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে। নতুন নোটের মধ্যে রয়েছে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখায় নতুন টাকা পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কাউন্টারে নতুন টাকার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন অনেকে। তবে এবছর ব্যাংকগুলোতে ছুটোছুটি করেও চাহিদা অনুযায়ী নতুন টাকার নোট সংগ্রহ করতে পারছেন না গ্রাহকরা।
এদিকে নতুন টাকার চাহিদা বাড়ায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী নতুন টাকা বিকিকিনির দোকান। নতুন নোটের পসরা সাজিয়ে বিক্রেতারা বসে আছেন। ক্রেতাদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে যারা সময় নষ্ট করতে চান না, অথবা অফিস সময়ের পরে ঝামেলামুক্তভাবে নতুন টাকা নিতে চান, মূলত তারাই এসব অস্থায়ী দোকানের ক্রেতা। এরসঙ্গে এ বছর নতুন করে যুক্ত হয়েছে ব্যাংক খাতে নতুন টাকার সংকট। যারা ব্যাংকে নতুন টাকা পাচ্ছেন না তারাও ভিড় জমাচ্ছেন অস্থায়ী এসব দোকানে। তবে সেক্ষেত্রে বান্ডিল (১০০টি নোট) প্রতি নোটভেদে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।
অস্থায়ী বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতারা বলছেন, ঈদে ৫, ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোটের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোটের চাহিদাও বেশ।
আজ মতিঝিলের অস্থায়ী দোকান থেকে নতুন টাকার নোট ক্রয় করতে মুগদা থেকে এসেছেন সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, ২০ হাজার টাকার নতুন নোট কিনেছি আমি। এর মধ্যে ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নোটের বান্ডিল রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে সবাইকে সালামি দেওয়া হবে। তাই এই নতুন নোট কেনা হলো। প্রতি বছরই আমাদের কেনা হয়। এই মতিঝিল থেকেই কিনি।
ব্যাংক থেকে কেন সংগ্রহ করেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছর ব্যাংকে গিয়েও টাকা পাইনি। এ ছাড়া ব্যাংক থেকে তো আসলে আমাকে এভাবে ভেঙে ভেঙে নোট নিতে দেবে না। এখান থেকে খুচরা কিনতে পারি। তাই এখান থেকেই কিনি।
গুলিস্তানের নতুন টাকার বিক্রেতা মো. তারেক বলেন, আমি নতুন টাকা বিক্রি করি, আবার পুরাতন টাকাও কিনি। ছেঁড়ার ওপর নির্ভর করে পনের থেকে বিশ শতাংশ কমে আমরা পুরাতন বা ছেড়া নোট কিনি। আর নতুন নোট বিক্রি করি একেকটা একেক দামে। আমার লাভ সীমিত। ঈদের আগে যে বিক্রিটা হয় সেটা আরও কয়েকদিন আগে শুরু হয়েছে। সাধারণ সময়ের থেকে এখন বিক্রি বেড়েছে।