নিজস্ব প্রতিবেদক: ৫০০ টাকার মধ্যেই যারা ঈদের পোশাক কিংবা জুতা কিনতে চান- এমন নিম্ন বা স্বল্প আয়ের অনেকেরই কেনাকাটার ঠিকানা রাজধানীর গুলিস্তান। এখানে বিভিন্ন মার্কেটের পাশাপাশি রয়েছে প্রায় সব রাস্তার ফুটপাতে নানা সামগ্রীর দোকান। আবার খুচরার পাশাপাশি রয়েছে পাইকারির বিশাল সম্ভার। অর্থাৎ আপনার ঈদের জন্য যে কোনো ধরনের পোশাক কিংবা জুতা-গহনার চাহিদা কম খরচে পূরণ করতে পারে এই এলাকার বিপণিবিতানগুলো।
বুধবার সরেজমিনে গুলিস্তানে দেখা যায়, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এ এলাকার মার্কেট ও ফুটপাতে জমে উঠেছে কেনাবেচা। পোশাক থেকে শুরু করে জুতা, প্রসাধনীসহ প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই পাওয়া যায় এখানে। দুপুর থেকেই গুলিস্তানে ভিড় লেগে যায়।
এখানের ফুটপাতে প্যান্ট, শার্ট, পায়জামা, পাঞ্জাবি, জুতা, বেল্ট, শিশুদের পোশাক, লুঙ্গি, মেয়েদের পোশাক, ট্রাউজার, টি-শার্ট, ঘড়ি, শাড়ি, মানিব্যাগ, চশমা সবই মেলে। দামেও অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় সস্তা। আবার এসব পণ্যের জন্য পাইকারি মার্কেট রয়েছে গুলিস্তানে। চাইলে সেখান থেকে অধিক পরিমাণেও কেনাকাটা করা যায়।
অন্যদিকে যাকাতের শাড়ি লুঙ্গির জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং ক্রেতাদের পছন্দের জায়গা গুলিস্তানের বিভিন্ন মার্কেট। বিভিন্ন দোকানে যাকাতের পণ্যগুলো কেনাবেচা জমে উঠেছে রোজার এ মাঝামাঝি সময়ে।
বিক্রেতারা বলছেন, আগামী সপ্তাহে আরও বাড়বে বেচাবিক্রি। কারণ এখন মাসের শেষ, তাই মানুষের হাতে টাকা কম। মাসের শুরুতে বেতন হওয়ার পর মার্কেটে হুমড়ি খেয়ে পড়বে লোকজন।
বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, গুলিস্তানে ২০০-৫০০ টাকায় প্যান্ট কেনা যাচ্ছে। ১৫০-৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের টি-শার্ট। ২০০-৫০০ টাকায় মিলছে পলো শার্ট, হাফ শার্ট, ফুল শার্ট ও পাঞ্জাবি। পায়জামা বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৪০০ টাকায়। এছাড়া ১৫০-৫০০ টাকায় পাবেন জুতা। নতুন কেডস পাবেন এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে।
এদিকে গুলিস্তানের নানা বয়সী নারীদের শাড়ি পাওয়া যায় ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। পাকিস্তানি লনের থ্রি-পিসগুলো বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। আর মেয়েদের ওড়না-হিজাব বিক্রি হচ্ছে দেড়শ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
শিশুদের পোশাকেরও বড় সম্ভার রয়েছে গুলিস্তানে। এরমধ্যে গেঞ্জি ১২০ টাকা, শার্ট পাবেন ২০০ টাকায়। মেয়ে শিশুদের জামা ২০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। বাচ্চাদের জুতা ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকার মধ্যে মিলছে।
অন্যদিকে ছেলে-মেয়েদের হাত ঘড়ির দাম পড়বে ১৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। এছাড়া ১৫০-৫০০ টাকায় পাবেন সানগ্লাস। ৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় মিলবে মোজা, সেন্ডো গেঞ্জি ও জাঙ্গিয়া।
গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ৪০০ টাকা করে শার্ট বিক্রি করছিলেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিক্রি এখন বাড়ছে। তবে আগামী মাসের শুরুতে বিক্রি ভালো হবে। তখন সবাই বেতন পাবে, সবার হাতে টাকা আসবে।
১০০ টাকা করে গেঞ্জি বা টি-শার্ট বিক্রি করছেন আরিফ। তিনি বলেন, ‘বেচাকেনা চলতাছে। কিন্তু পুলিশ আইসা মাঝে মধ্যে ঠেইলা-ঠুইল্লা দিতাছে। কারণ ভিআইপিরা আসা-যাওয়া করতাছে। এখন একটু সমস্যা।’
পীর ইয়ামেনী মার্কেটে জিন্স প্যান্ট বিক্রি করছেন শরিফুল ইসলাম। তার দোকানে ৭০০-৯০০ টাকায় মিলছে গ্যাবাডিন ও জিন্স প্যান্ট। তিনি বলেন, বেচাবিক্রি খারাপ না। আগামী কয়েকদিন বিক্রি আরও বাড়বো। অনেকেই শেষে কিনবেন।
এখন ক্রেতা কেমন হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাগো এখানের মতো কম দামে কোথাও কাপড় পাইবেন না। যারা কমে কিনতে চান, তাগো গুলিস্তানে আইতে অইবোই।’
ওই মার্কেটের পাশাপাশি গুলিস্তান এলাকার সিটি করপোরেশনের ঢাকা ট্রেড সেন্টার, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্স, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স, গ্যানিস সুপার মার্কেটেও বেচাকেনা জমে ওঠেছে। এসব মার্কেট ঘুরেও দেখা গেছে ক্রেতার ভালো ভিড়।