নিজস্ব প্রতিবেদক: সাউথইস্ট ব্যাংকের পর্ষদ সভায় তড়িঘড়ি করে একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানির অনুকূলে ৬৭৯ কোটি টাকার বিনিয়োগ স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বেসরকারি এ ব্যাংকটির সবশেষ ওই পর্ষদ সভায় প্রস্তাবটি উপস্থাপন ও পাসের প্রক্রিয়া নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়ে ওই বিনিয়োগ স্থানান্তর আটকে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কোন স্বার্থে তড়িঘড়ি করে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এমন সিদ্ধান্ত নিলো- প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। আর ওই সিকিউরিটিজ কোম্পানির অনুকুলে এ অর্থ স্থানান্তরে পরিচালনা পর্ষদের প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তিরা জোর প্রচেষ্টা চালান বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও ব্যাংকটির কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
জানা যায়, যে সিকিউরিটিজ কোম্পানির অনুকূলে সাউথইস্ট ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত ৬৭৯ কোটি টাকার শেয়ার স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে কোম্পানিটি এর আগে ওই ব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেছিল। পরবর্তী সময়ে সে আবেদন সংশোধন করে ঋণের পরিমাণ ১০০ কোটিতে উন্নীত করা হয়। কিন্তু একটি পক্ষের বিরোধিতায় সাউথইস্ট ব্যাংকের পর্ষদ সভায় আবেদনটি পাস হয়নি। ঋণ অনুমোদন দিতে না পেরে প্রতিষ্ঠানটিকে প্যানেল ব্রোকারেজ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিকল্প প্রস্তাব তোলা হয়েছিল।
জানা গেছে, ২০ ফেব্রুয়ারি সাউথইস্ট ব্যাংকের পর্ষদ সভা চলাকালে ওই সিকিউরিটিজ কোম্পানির অনুকুলে ৫০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাবটি কয়েক দফায় সংশোধন করে ৫৭০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। পর্ষদ সভা শেষে নথি চূড়ান্ত করার সময় ঋণের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে সব মিলিয়ে ওই সিকিউরিটিজ কোম্পানির বিপরীতে সাউথইস্ট ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৭৯ কোটি টাকা।
সাউথইস্ট ব্যাংক এমন কী কারণে এতো তড়িঘড়ি ওই সিকিউরিটিজ কোম্পানিকে এত টাকার বিনিয়োগ স্থানান্তর করতে চেয়েছিল। কোন কারণে একই পর্ষদ সভায় বারবার সংশোধন করা হচ্ছিল প্রস্তাব- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের (এফআইসিএসডি) পক্ষ থেকে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়। ওইদিনই বিভাগটির পক্ষ থেকে সাইথইস্ট ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন চালানো হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দলের প্রধান ছিলেন এফআইসিএসডির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১-এর ৪৪ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে সাউথইস্ট ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন চালানো হচ্ছে। চলমান এ পরিদর্শনের সুবিধার্থে ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ব্যাংকের ৭২১তম পরিচালনা পর্ষদ সভার ৯নং এজেন্ডায় অনুমোদিত সিকিউরিটিজ কোম্পানির অনুকূলে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত কোনো অর্থ ছাড় না করার জন্য অর্থাৎ সিকিউরিটিজ কোম্পানির মাধ্যমে কোনো স্টক ক্রয় না করার জন্য আপনাদের পরামর্শ দেয়া হলো।’
সূত্রের তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে বিভিন্ন শেয়ার কেনার মাধ্যমে সাউথইস্ট ব্যাংকের ৬৭৯ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। তিনটি ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে এ শেয়ার লেনদেন করে ব্যাংকটি। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ব্যাংকটির পর্ষদ সভায় অন্য একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানির ব্রোকারেজ হাউজের অনুকূলে বিনিয়োগের পুরো অর্থই স্থানান্তরের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। পরে আরও কয়েক দফায় প্রস্তাবটি সংশোধন করে পাস দেখানো হয়।
ব্যাংকের পুরো বিনিয়োগ পোর্টফোলিও একটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে স্থানান্তরের প্রস্তাব নিয়ে সাউথইস্ট ব্যাংকের ভেতরেই বিতর্ক তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কানে যায়। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সাউথইস্ট ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শক দল পাঠানো হয়। অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় দিনের শেষভাগে সাউথইস্ট ব্যাংক এমডিকে পর্ষদে অনুমোদিত অর্থ ছাড় না করতে চিঠি দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি কেটে দেন। হোয়াটসঅ্যাপে বিষয় উল্লেখ করে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’