নিজস্ব প্রতিবেদক: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, বাজারে যে পণ্যটা ওঠে সেটা অবিকৃত থাকছে না। মানুষও খালি হাতে ফিরছে না। এ দেশেই কিন্তু খাদ্যের অভাব ছিল, দুর্ভিক্ষ ছিল। বাজারে টাকা দিয়েও খাদ্য মিলতো না। সেখান থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি। আমাদের এখন চাল বাইরে থেকে আমদানি করতে হয় না। এই মুহূর্তে মানুষের হাতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ টাকা আছে। আমাদের বাজারে মানি সাপ্লাইটা বেশি।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে ‘দ্রব্যমূল্যে অস্থিরতা : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বাজারের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলোকে ১২ মাসই নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ করতে চাই। একইসাথে পূর্ণাঙ্গভাবে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, আধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনা এবং ভ্যালু চেইন নিয়ে কাজ করতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা বাজারে প্রতিযোগিতা এস্টাবলিশ করতে চাই। যারাই আমদানিকারক বা উৎপাদক আছেন তারা যদি একটি প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকে তাহলে কিন্তু ন্যায্য মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারব।
বাজার নিয়ন্ত্রণের করণীয় ও ধাপগুলো কেউ দিয়ে দিলে প্রতিমন্ত্রী খুশি হতেন উল্লেখ করে বলেন, এখন গবেষণা নেই। গবেষণা করবে কে? বিআইডিএসের কাজ গবেষণা করা। আমাদের কৃষিপণ্য নিয়ে গবেষণা করতে হবে। সুগার নিয়ে গবেষণা করতে হবে। আমরা কি আগের মতো সুগার মিল চালু করব? ইক্ষু চাষ করব নাকি চিনি আমদানি করব এ বিষয়েও গবেষণা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ নেই এটি একটি সঠিক বক্তব্য নয়। আমাদের যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে তা চাপের বিষয় এতে সন্দেহ নেই। ৪৮ বিলিয়ন থেকে এটা ২০ বিলিয়নে এসেছে। আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী আগামী তিন মাসের আমদানির জন্য এ রিজার্ভ যথেষ্ট। আমরা যদি রিজার্ভ রেখে দিয়ে ভ্যাকসিন না আনতাম তাহলে কিন্তু দেশে আরও একটা দুরবস্থা তৈরি হতো।
এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও কিন্তু সাড়ে তের লাখ মেট্রিক টন খাদ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এর কারণে আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি রমজানে আমাদের কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট থাকবে না। আমরা যদি আমদানি না করতাম তাহলে তো রিজার্ভ আরও বেশি থাকতো।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমাদের রিজার্ভের টাকা তেল আমদানিতে খরচ হচ্ছে। বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে জ্বালানি আমদানিতে। আগে আমাদের সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা ছিল কিন্তু সেটা এখন বেড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হয়েছে। এটা চালাতে তো আমাদের ফুয়েল দরকার হয়। আমাদের কিছু গ্যাস থাকলেও এ খাত শতভাগ আমদানিনির্ভর। আমরা এই আপনার একটা না করলে আমাদের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়নে থাকতো। আমি মনে করি, ২০ বিলিয়ন রিজার্ভ চাপে থাকলেও আছে। আমরা এটা কি বৃদ্ধি করতে চাই। এটার জন্য আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে। আমদানি ব্যবস্থাপনাকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে হবে। আমরা কিন্তু বসে নেই
তিনি বলেন, আমরা প্রতি লিটার তেলে ১০ টাকা কমাতে পেরেছি। আমদানি এবং পণ্য সরবরাহ আছে বলেই দাম কমেছে। যারা উৎপাদক ও আমদানিকারক তারাই রমজান উপলক্ষ্যে কমিয়েছে। ভোক্তা, আমদানিকারক, উৎপাদক এবং জনপ্রতিনিধি সবাই কিন্তু আমাদের দেশের। ভ্যালু চেইনের কোনো একটা জায়গা দুর্বল করে কিন্তু আমরা একটা জায়গায় নিয়ে আসতে পারব না। আমরা কাউকে একতরফা দোষারোপ করা ঠিক হবে না। আবার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সেটাও কিন্তু সঠিক বার্তাটি যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি যারা নিয়ম মোতাবেক ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করে সাধারণ মানুষের কষ্টের কারণ হবে না সেইসব আমদানিকারক উৎপাদকদের আমরা পলিসি সাপোর্ট দিয়ে যাব। কিন্তু কেউ যদি ভ্যালু চেইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এটাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে তাহলে আমরা শক্ত হতে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে এবং সেটা অব্যাহত থাকবে।