নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য আর প্রকাশ করবেন না বলে জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশের যেসব সংগঠন বা সরকারি সংস্থা সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করছে তা ভিন্ন ভিন্ন হচ্ছে। এতে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। আমরা বরাবরই বলে আসছি সরকার নিজ উদ্যোগে দুর্ঘটনার তথ্য প্রকাশ করুক। যদিও বিআরটিএ গত বছর থেকে এই তথ্য প্রকাশ করছে কিন্তু এর মধ্যে হাসপাতালের কোনো তথ্য নেই।
তিনি বলেন, পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনার যে তথ্য প্রকাশ করে তাতে শুধু থানায় মামলার ঘটনা তুলে ধরা হয়। যদিও সব দুর্ঘটনায় মামলা হয় না। তাহলে আমরা এই তথ্য বিশ্বাস করবো কীভাবে। যেমন আমার স্ত্রী দুর্ঘটনায় মারা গেলে আমি কোনো মামলা করিনি।
তিনি বলেন, আমি আমার সংগঠন থেকে আর এ তথ্য প্রকাশ করবো না। আমাদের সেল চালু থাকবে নিজস্ব গবেষণার জন্য। তবে সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে বেসরকারি যে সমস্ত এক্সপার্ট আছে তাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে সামিল করে একটা শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করার। এক্ষেত্রে
আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরার যে ধারা আমরা শুরু করেছি সরকার যদি আমাদের সাপোর্ট এবং আর্থিক বরাদ্দ দেয় তাহলে আমরাও সরকারের সাথে এ কাজটি সঠিকভাবে করতে পারবো এই বিশ্বাস আমাদের আছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলতে চাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সড়ক দুর্ঘটনা বা রোডক্র্যাশকে প্রতিরোধযোগ্য একটি অসংক্রামক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এছাড়াও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩.৬ অর্জনে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা বা রোডক্র্যাশে প্রাণহানির সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বৈশ্বিক পর্যায়েও ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘভুক্ত সদস্য দেশগুলো বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনা বা রোডক্র্যাশে নিহত ও আহতের সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য গ্লোবাল প্ল্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০ এর আওতায় ৫টি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে।
সেগুলো হলো- বহুমুখী যানবাহন ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো, নিরাপদ সড়ক ব্যবহার, রোডক্র্যাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়াও সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য ৫টি আচরণগত ঝুঁকি যেমন, গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ না করা, সিট বেল্ট ব্যবহার না করা, মানসম্মত হেলমেট পরিধান না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং শিশুবান্ধব বিশেষায়িত আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ২০১০ থেকে ২০২১ সালে বেলারুশ, ব্রুনাই দারুসসালাম, ডেনমার্ক, জাপান, লিথুয়ানিয়া, নরওয়ে, রাশিয়ান ফেডারেশন, ত্রিনিদাদ, টোবাগো, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভেনিজুয়েলা রোডক্র্যাশে মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সরকার যদি নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিআরটিএর মাধ্যমে সমন্বয় করে একটু শক্তিশালী মনিটরিং সেলের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রকাশ করে তাহলে জনগণের মধ্যে আর বিভ্রান্তি থাকবে না।