নিজস্ব প্রতিবেদক: ৩৫টি কোম্পানি বাদ দিয়ে বাকিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর দ্বিতীয় কর্মদিবসেই শেয়ারের ক্রেতার দেখা মিলল। ছয় মাসেরও বেশি সময় পর লেনদেন ছাড়াল হাজার কোটির ঘর।
প্রথম দিন উদ্বেগ আতঙ্কের মধ্যে যেসব কোম্পানি ১০ শতাংশ বা কাছাকাছি দর হারিয়ে ফেলেছিল, সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি হারিয়ে ফেলা দর ফিরে পেয়েছে। তবে টানা দ্বিতীয় দিন সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে দরপতন হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
গত বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তার সিদ্ধান্ত জানানোর পর দরপতনের সীমা ছাড়া লেনদেন শুরু হয় রোববার। ছয় মিনিটের মধ্যেই সূচক পড়ে যায় ২১৬ পয়েন্ট। তবে এই ধাক্কা সামলে নিয়ে পরের সোয়া চার ঘণ্টায় সেখান থেকে পুনরুদ্ধার হয় ১২০ পয়েন্ট।
সোমবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে সূচক পড়ে যায় ৫১ পয়েন্ট। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। ১০টা ১৭ থেকে বাকি সময় ইতিবাচক প্রবণতা দিয়েই শেষ হয় লেনদেন।
শেষ পর্যন্ত সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সে ১৪ পয়েন্ট যোগ হয়ে অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্ট। আগের দিন ৯৬ পয়েন্ট কমে যাওয়ার পর এটি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস যোগাবে বলেই বিশ্বাস করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
শেষ পর্যন্ত ২০৭টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি, ১৪৫টির দরপতন এবং ৪০টির দর আগের দিনের সমান থেকে শেষ হয় লেনদেন।
সকালে ১০ শতাংশের কাছাকাছি দর হারিয়ে ফেলা বেশ কিছু কোম্পানির দর দিন শেষে ১০ শতাংশ বেড়েছে, বিপুল সংখ্যক ক্রেতার দেখাও মিলেছে।
এই হিসাবে প্রথম এসব কোম্পানির দর তার আগের ফ্লোর প্রাইসে ফিরে এসেছে, কিন্তু এতদিন ক্রেতা না থাকলেও এখন তা আছে।
আবার ফ্লোর উঠার পর শেয়ারের ক্রেতার দেখা মিলেছে, দামও বেড়েছে, এমন কোম্পানিও আছে।
দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণই বলে দিচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সক্রিয় হয়েছেন ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীরাও।
সারা দিনে হাতবদল হয়েছে এক হাজার ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার, যা ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
২০২৩ সালের ১৮ জুলাই এক হাজার ৪৪ কোটি টাকা ৫৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল।
সিভিসি ব্রোকারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যেমন বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, তেমনি অনেক ব্যক্তিও শেয়ার কিনেছেন।
“কিছু শেয়ারে অনেক দিন ধরে বিনিয়োগকারীরা আটকে ছিল ক্রেতার অভাবে। যারা শেয়ার কিনেছেন, তারা এই সুযোগটি লুফে নিয়েছেন। এখন শেয়ার কেনা-বেচা দুটিই করা যাচ্ছে। এতে পুরনো বিনিয়োগকারীরাও বাজারে টাকা নিয়ে আসছেন।”
তবে এখনও বাজার পর্যবেক্ষণে আছেন সাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘বাজারকে কোনো পক্ষ কৃত্রিমভাবে সাপোর্ট দিচ্ছে। সূচকের পতন হওয়ার পরপরই আবার উঠে পড়া মানেই হচ্ছে কেউ টেনে তুলছে। তারা যদি বাজার থেকে হঠাৎ করে বেরিয়ে যায় তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কী অবস্থা হবে? তাই আরো কয়েকদিন দেখে নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেব।’’
সূচকে সবচেয়ে বেশি ১.০১ পয়েন্ট যোগ করেছে স্কয়ার ফার্মা। এর বাইরে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন, ইউনিলিভার, ট্রাস্ট ব্যাংক, বার্জার পেইন্টস, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট, মেরিকো, নাভানা ফার্মা ও বসুন্ধরা পেপারও সূচকে কিছু পয়েন্ট যোগ করেছে।
বিপরীতে ৭.৪৯ শতাংশ দর হারানো ওয়ালটন হাইটেক কোম্পানি একাই সূচক কমিয়েছে ৭.৪৪ পয়েন্ট। তিতাস গ্যাসের শেয়ারদর ৯.৭৬ শতাংশ কমায় সূচক পড়েছে আরো ১.১৯ পয়েন্ট।
আইসিবি, আইপিডিসি, জিপিএইচ ইস্পাত, এসিআই, বিকন ফার্মা, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও পাওয়ার গ্রিডও সূচক টেনে ধরার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকায় ছিল।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে
সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ ও কাছাকাছি দর বেড়েছে ৯টি কোম্পানির। এগুলো হল: অলিম্পিক অ্যাকসেসোরিজ, ঢাকা ডায়িং, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন, ইমাম বাটন, ফার্স্ট প্রাইম ফাইন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড, ইনটেক অনলাইন, আফতার অটো, সেন্ট্রাল ফার্মা ও সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ।
এসব কোম্পানির মধ্যে অনেকগুলোর দর আগের দিন ১০ শতাংশ বা কাছাকাছি কমেছিল।
আরো ৬টি কোম্পানির দর আট শতাংশের বেশি, ৫টির দর সাত শতাংশের বেশি, ছয়টির দর ৬ শতাংশের বেশি, ১৫টির দর ৫ শতাংশের বেশি, ২১টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ২৮টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ৪১টির দর বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি।
টানা দুই দিন ৫০টির দর কমল সর্বোচ্চ সীমায়
আগের দিনের মতো এদিনও দরপতনের সর্বোচ্চ সীমায় নেমে লেনদেন শেষ করেছে ৫০টি বেশি কোম্পানি। তবে এই সংখ্যা আগের দিন ছিল ১১৬।
দরপতনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হল কুইনসাউথ টেক্সটাইলস, তাল্লু স্পিনিং সিলস, এসএস স্টিল, ভিএসএফে টেক্সটাইল, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল, বিবিএস ক্যাবলস, নিউলাইন ক্লথিং, ফরচুন সুজ, এস্কয়ার নিটিং ও ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস।
সব মিলিয়ে ৬টির দর ১০ শতাংশ, ৩৯টির দর ৯ শতাংশের বেশি, ১৩টির দর ৮ শতাংশের বেশি, ৯টির দর ৭ শতাংশের বেশি, ৫টির দর ছয় শতাংশের বেশি, ৮টির দর পাঁচ শতাংশের বেশি, ৭টির দর চার শতাংশের বেশি, আরো ৭টির দর তিন শতাংশের বেশি কমেছে।