কক্সবাজার প্রতিনিধি : সংসদ নির্বাচনের একদিন আগে কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ বিহারে আগুন দিয়ে নির্বাচন বানচাল, সরকারকে বিব্রত করা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ‘পরিকল্পিতভাবে’ বৌদ্ধ বিহারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. আব্দুল ইয়াছির ওরফে শাহজাহান (২৩) নামে এক যুবককে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, এ ইয়াছিরই ঘটনার হোতা।
সে অকপটে সবকিছু পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে একাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে।
বৃহস্পতিবার ( ১১ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এসপি মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার মো. আব্দুল ইয়াছির ওরফে শাহজাহান রামু উপজেলার ফতেখাঁরকূল ইউনিয়নের পূর্ব মেরংলোয়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে। তার বাবা ফতেখাঁরকূল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি।
গত ৫ জানুয়ারি শুক্রবার দিনগত রাত ২টার দিকে রামু উপজেলা সদরের চেরাংঘাটা এলাকায় ‘উসাইচেন রাখাইন বৌদ্ধ বিহার ( বড় ক্যাং ) অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় বিহারটির ওপরের মূল প্রবেশদ্বারের সিঁড়িটি পুড়ে যায়।
এ ঘটনায় গত ৭ জানুয়ারি বৌদ্ধ বিহারটি পরিচালনা কমিটির সভাপতি মংকিউ রাখাইন বাদী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার এজাহারের বরাতে পুলিশ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, গত ৫ জানুয়ারি মধ্যরাতে বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগের অন্তত ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগে রামু ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে জনৈক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে ফোন করে জানান, রামুর ঈদগড় বাজারে আগুন লেগেছে। আবার একই ব্যক্তি রামু বিদ্যুৎ অফিসেও ফোন করে চেরাংঘাটা এলাকায় আগুন লাগার তথ্য দিয়ে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করার অনুরোধ করে। এসপি জানান, এ দুটি ফোনই করেছিল ইয়াছির।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও বিদ্যুৎ অফিসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি করার বিষয়টি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং পরিকল্পিত দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, মূলত অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি বাধাহীন করতে ঘটনার হোতা আব্দুল ইয়াছির ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ অফিসকে ফোন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে।
ঘটনার সময় ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট থেকে সিমকার্ডটি আলাদা করে নিজের এলাকার কচুক্ষেতে ফেলে দিয়ে ইয়াছির চট্টগ্রামে আত্মগোপন করে।
এসপি বলেন, মূলত বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করা এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে মোবাইল ফোনের কলের সূত্র ধরে তথ্য যুক্তির সহায়তায় পুলিশ জড়িতদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে। অবস্থান শনাক্ত করে ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকা থেকে মো. আব্দুল ইয়াছিরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেপ্তার আসামির প্রাথমিক স্বীকারোক্তির বরাতে পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার সময় আব্দুল ইয়াছির একাই ছিল। আর অগ্নিসংযোগের জন্য সে কিছু কাপড়ের টুকরা এবং বড় একটি বোতলে তরল দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করেছে।
ঘটনাটি একাই সংঘটিত নাকি তার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানান মাহফুজুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার আসামি আব্দুল ইয়াছিরের বাবা আব্দুল করিম বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতা। পরিবারটির সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। গ্রেপ্তার আব্দুল ইয়াছিরকে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে সরব অংশগ্রহণ দেখা গেছে। এছাড়া বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাকে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। এমনকি তার ফেসবুক আইডিতেও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
অন্যদিকে অভিযুক্ত আব্দুল ইয়াছিন এ প্রতিবেদকের কাছেও বৌদ্ধ বিহারে আগুন দেওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এ সময় কেন বৌদ্ধ বিহারে আগুন দিয়েছে জানতে চাইলে ইয়াছিন প্রতিবেদককে বলেন, ২০১২ সালের রামুর বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনার বিচার ও তদন্ত সুষ্ঠু হয়নি। এটা নিয়ে আমার ভেতরে আক্ষেপ তৈরি হয়েছে। এটা নিয়ে আমি আসক্ত হয়ে গেছি। এদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমি ঘটনা ঘটিয়েছি।