অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক: ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের মোট পণ্য রপ্তানিতে পোশাকবহির্ভূত পণ্যের অবদান কমেছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ কমে ৬৪৭ কোটি ডলারে নেমেছে। এর মধ্যে সর্বাধিক নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে পেট্রোলিয়াম উপজাত রপ্তানিতে। তার পরই রয়েছে কার্পেট (পাট ও অন্যান্য), কৃষি পণ্য, প্রকৌশল পণ্য এবং হিমায়িত ও তাজা মাছ। বিজিএমইএ সংকলিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পোশাকবহির্ভূত খাতের পণ্য রপ্তানি কমে যাওয়া দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে ডলার সংকটে ভুগছে। নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। তৈরি পোশাক খাত ছাড়া অন্য খাতগুলোয় কমেছে রপ্তানি আয়। আগামীতে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটলে তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর বড় আঘাত আসার আশঙ্কা রয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের মতো অন্য খাতগুলোয়ও গুরুত্ব দিয়ে রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। তা না হলে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরো ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৪৭ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার ডলারের পোশাকবহির্ভূত পণ্য রপ্তানি করে। এর আগের অর্থবছর যা ৭০৮ কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে ৬১ কোটি ২ লাখ ৯০ হাজার ডলারের।
ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ছয় অর্থবছরের মধ্যে ২০১৮-১৯-এ পোশাকবহির্ভূত খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর পরের বছর রপ্তানি কমে ১০ শতাংশেরও বেশি। পরবর্তী ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থাৎ টানা দুই অর্থবছরে রপ্তানিতে লক্ষণীয় প্রবৃদ্ধি দেখা দেয়। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আবারো নেতিবাচক হয়ে পড়ে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও রপ্তানির চিত্র ছিল নিম্নমুখী।
পোশাকবহির্ভূত রপ্তানি পণ্যের মধ্যে অন্যতম চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি পণ্য, প্রকৌশল পণ্য, হিমায়িত ও তাজা মাছ, কার্পেট, পেট্রোলিয়াম উপজাত। এসব পণ্যের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব পণ্য রপ্তানি হয় ১২২ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ডলারের। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার ডলারের। সে হিসাবে রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের রপ্তানি হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ৯১ কোটি ২২ লাখ ডলারে নামে। কৃষি পণ্য রপ্তানি ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে নেমেছে ৮৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি হলেও আগের অর্থবছরে তা ছিল ৭৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে ২০ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের।
পোশাকবহির্ভূত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে জোর দিতে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবি-সংশ্লিষ্টরা জানান, রপ্তানি খাতে সরকার বৈচিত্র্য আনয়নের কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগগুলোর সুফল রাতারাতি পাওয়া যাবে না। এগুলো সময়সাপেক্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতির কারণে রপ্তানি বৃদ্ধি করা যায়নি। পোশাকবহির্ভূত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নীতিসুবিধা আদায়, প্রাপ্তি ও কার্যকর হওয়া সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে রপ্তানি খাতকে আরো বৈচিত্র্যময় করতে হবে। তাহলে রপ্তানি নেতিবাচক হবে না।
রপ্তানিকারকদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পোশাক খাতে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে পোশাক ও বস্ত্র খাতের হিস্যা ধরে রেখে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। সাহস ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরা এটা সম্ভব করেছেন। অন্য খাতের উদ্যোক্তারা সাহসী ভূমিকা রাখতে পারেননি। নীতিসহায়তা কাজে লাগানোর সক্ষমতাও অর্জন করতে হবে তাদের। এজন্য উদ্যোক্তাদের সাহস ও নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।