নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট ও আলোচিত প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। তার মধ্যে বর্তমান প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক মন্ত্রীসহ একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তারা এলাকার জনপ্রিয় প্রার্থীদের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
এই প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার উল্লেখযোগ্য।
এদিকে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমর্থিত ৬ প্রার্থীর মধ্যে দুই জন নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন (বরিশাল-২) ও জাসদের রেজাউল করিম তানসেন (বগুড়া-৪)।
হেরে যাওয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-
পিরোজপুর-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে হেরে গেছেন সাত বারের এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
সিলেট-৬ আসনে হেরেছেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী।
কুষ্টিয়া-২ আসনে হেরেছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার।
রংপুর-১ আসনে মসিউর রহমান রাঙ্গা।
ফরিদপুর-৪ আসনে কাজী জাফর উল্লাহ।
জামালপুর-৪ আসনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান।
ঢাকা-১৯ আসনে ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনি মাঠে ছিলেন।
হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে হেরেছেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে হেরেছেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।
নেত্রকোনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার।
বরগুনা-১ আসনে হেরেছেন পাঁচ বারের সংসদ সদস্য নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।
রাজশাহী-১ আসনে হেরেছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া (মাহিয়া মাহি)।
মাদারীপুর-৩ (সদর একাংশ, কালকিনি ও ডাসার) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপ।
মুন্সিগঞ্জ থেকে নির্বাচন করে হেরে গেছেন বিকল্পধারার বর্তমান এমপি মাহী বি চৌধুরী।
টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম) পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনুপম শাহজাহান জয়ের কাছে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ২৯৯ আসনের মধ্যে একটি বাদে এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে মোট ২৯৮ আসনের ফলাফল। সেই ফলাফলে ২২২ আসন নিয়ে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। চমক দেখিয়ে ৬২ জন স্বতন্ত্রপ্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
আর একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি (জাপা) এবার বিজয়ের দেখা পেয়েছে মাত্র ১১টিতে। এদিকে, কল্যাণ পার্টি একটি এবং মহাজোটের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি পেয়েছে একটি করে মোট দুটি আসন। অন্যদিকে, খালি হাতে ফিরেছে বিএনপির দলছুট নেতাদের নিয়ে গঠিত শমসের মুবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকারের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপিসহ ২৩টি দল।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে নামেন মোট এক হাজার ৯৬৯ প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬৫টি, জাতীয় পার্টি ২৬৪টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ৬৬টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৬টি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এ ছাড়া ভোটের লড়াইয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী ছিলেন ৪৩৬ জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলাফলে বিজয়ীর তালিকায় আসেন আওয়ামী লীগ থেকে ২২২ জন, জাতীয় পার্টি লাঙ্গলের ১১ জন, মহাজোট মনোনীত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ে বগুড়া-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন আর একই প্রতীকে বরিশাল-২ থেকে জয় পেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ ছাড়া মাত্র একটি আসনে জয়ের মুখ দেখেছে হাত ঘড়ি প্রতীকে ভোটের মাঠে থাকা কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। কক্সবাজার-১ বেসরকারিভাবে বিজয়ী হন তিনি।
আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ট্রাক প্রতীকে ২৫টি, ঈগল প্রতীকে ২৩টি, ঢেঁকি প্রতীকে একটি, কলার ছড়ি প্রতীকে তিনটি, কেটলি প্রতীকে পাঁচটি ও কাঁচি প্রতীকে পাঁচটি আসনে জয় পান। সব মিলিয়ে ৬২টি আসনে চমক দেখান স্বতন্ত্রের এই প্রার্থীরা।