নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বহু কষ্টে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করতে পারছে না দেশের জনগণ। মাঝে মধ্যে এমন শাসক ক্ষমতায় আসেন তারা জনগণের কাঁধে চেপে বসেন। এখন আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অবলীলায় মিথ্যা কথা বলছেন। তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এসব করছেন।
আজ (২৮ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা যেন মাস্তানের মতো কথা বলছেন। বিশেষ করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান যে ভাষায় কথা বলেন তা সম্পূর্ণ ছাত্রলীগের নেতাদের মতো। তিনি রাতের আঁধারে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল, কৃষকদল নেতা মেহেদী হাসান পলাশকে ধরে জোর করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করছে। সবকিছুই মনিটরিং করছে সরকার আর বাস্তবায়ন করছে তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা কিভাবে নাশকতা করে? আসলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন পুলিশের নজরদারির মধ্যে বন্দি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে রিজভী বলেন, আমরা কিন্তু বেলুচিস্তান ও রাজস্থান থেকে আসিনি। আমরা এদেশের সন্তান। এ দেশের আলো বাতাস ও মাটির গন্ধ আমাদের গায়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী আপনি কি চান? সেটা বলে দেন। মনে রাখবেন এসবের হিসাব কিন্তু জনগণের কাছে দিতে হবে। বিশ্বের বহু দেশে স্বৈরশাসকদের পতন কিভাবে হয়েছে তা কিন্তু জানা আছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যত নাশকতাকারী হাতেনাতে ধরা হয়েছে তার সবই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজন। যেভাবে ২০১৩-২০১৪ সালে সরকার ও তার সংস্থার লোকেরা পরিকল্পিতভাবে নাশকতা করেছে এখনও তেমনই করা হচ্ছে। আজকে সব ধরনের গুম-খুনের সঙ্গে সরকারের লোকজন জড়িত। সবই হচ্ছে সরকারের নির্দেশে। বগুড়ায় দুজন নেতাকে ইতিমধ্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেই আছে। কিন্তু তাদের কোনো সন্ধান দিচ্ছে না।
‘নির্বাচন ইস্যুতে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে’- গোয়েন্দা প্রধানের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, আমরাও কিন্তু সংবিধান পড়েছি। ওটাতে হিব্রু ভাষায় লেখা নেই। সুতরাং আপনারা নিজেরাও সংবিধান ভালোভাবে পড়ুন। দেশের ইতিহাস জানুন। এতই যদি সংবিধানপ্রীতি আপনার বা আপনার সরকারের থাকতো তাহলে ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনের অধীনে নির্বাচন কেন করলেন? সেখানে তো সংসদ ভেঙে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা ছিল। কিন্তু তারা কেন দুই বছর ক্ষমতায় থাকলো? আপনারা তাদের অধীনেই মাস্টারপ্ল্যানের নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছেন। যা পরে সরকারের নিকটজনরাই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
রিজভী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েমের প্রবণতা নিয়ে কাজ করছে। তারা পুরোদমে একদল ও ব্যক্তির শাসন কায়েম করতে চায়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ লড়াই-সংগ্রাম করছেন। মানুষের ভোটাধিকার ও হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতেই আমাদের সংগ্রাম চলছে। আমাদের বিজয় সন্নিকটে। কেননা এটা প্রমাণিত যে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সেজন্যই দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। জোর জবরদস্তি করলেও তারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। ভোট দিতে যাওয়া না যাওয়ার অধিকার মানুষের রয়েছে।
সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট গ্রেপ্তার ১২০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ৪টি, মোট আসামি ৩৩৭ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট আহত ১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী। গত ১৫ নভেম্বর একতরফা তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার ১১ হাজার ৭৫৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ৪২৩টি, মোট আসামি ৪৫ হাজার ৫৫৩ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট আহত ১ হাজার ৭১২ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মোট মৃত্যু ১৩ জন।