আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে সে-ই নির্বাচিত হবে। কেউ কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না। এখানে কোনো রকম সংঘাত, মারামারি আমি দেখতে চাই না। কোনো সংঘাত হলে, আমার দলের যদি কেউ করে তাহলেও রেহাই নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেব। সেটা মনে রাখবেন।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে পাঁচ জেলার নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ভোটের অধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ, সেটা অব্যাহত থাকবে। এবার নির্বাচনে আপনাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ করে কোনো মানুষের ক্ষতি যেন করতে না পারে। এদিকে সকলকে সজাগ থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন, জনগণ ভোট দেবে। ভোটের মালিক জনগণ, এটা তাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা এটা উন্মুক্ত করেছি। আমাদের নৌকার প্রার্থী আছে, স্বতন্ত্র আছে, অন্যান্য দলও আছে। প্রত্যেকে জনগণের কাছে যাবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই নির্বাচিত হবে। কেউ কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করবেন না। এখানে কোনো রকম সংঘাত, মারামারি আমি দেখতে চাই না। কোনো সংঘাত হলে, আমার দলের যদি কেউ করে, তাহলে রেহাই নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেব। সেটা মনে রাখবেন। আমরা চাই জনগণ তার ভোটের অধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করুক। যাকে খুশি তাকে পছন্দ করবে, তাকে ভোট দেবে। সে জয়ী হয়ে আসবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রকে আমাদের আরও সুদৃঢ় করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাবে। আজকে যতটুকু উন্নতি করেছি থাকবে না। আমারা দেশের মানুষের জন্য দিন রাত পরিশ্রম করি, বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে। উন্নত সমৃদ্ধ ক্ষুধা মুক্ত, স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে যাব। জনগণকে আহ্বান জানাই, নৌকায় ভোট দিয়ে আপনাদের জন্য সেবা করার সুযোগ দিন।
অতীতে ভোটের অধিকার ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয়েছিল
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম অত্যাচার হয়েছিল বলে জনসভায় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারাই নৌকায় ভোট দিয়েছিল তারাই নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয়েছিল। জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে; এই প্রত্যয় নিয়েই সংগ্রাম করেছি। অনেক সংগ্রাম, ঘাত-প্রতিঘাত আমাদের পার করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে, কারাগারে যেতে হয়েছে। তারপরও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা ২১ বছর পরে ক্ষমতায় আসি। জনগণের সেবক হিসেবে যাত্রা শুরু করি। ৯৬ থেকে ২০০১ সাল ছিল ৭৫-এর পরে বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বর্ণযুগ।
তিনি বলেন, আমরা খাদ্যসেবা নিশ্চিত করি, চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিই, শিক্ষার ব্যবস্থা করি, বিনামূল্যে বই দেওয়ার ব্যবস্থা করি। আমরা এ দেশের রাস্তাঘাট-পুল ব্রিজ নির্মাণের কাজ হাতে নিই, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করি। ১৬০০ থেকে ৪৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করি। প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেব সেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। কারণ, একটা বড় দেশ থেকে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব ছিল, আমি বলেছিলাম এটা জনগণের সম্পদ আমি বিক্রি করতে পারি না। কিন্তু খালেদা জিয়া রাজি হয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি কত মানুষকে হত্যা করেছে তার কোনো হিসাব নেই। আমাদের মা-বোনদের ওপর পাকিস্তানিরা যেভাবে নির্যাতন করেছে, সেভাবেই নির্যাতন করেছে। সেইসময় ফাহিমা, মহিমা, রুমা আত্মহত্যা করে নিজেদের ইজ্জত বাঁচান। এ রকম একটা তাণ্ডব শুধু নয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন বাংলাদেশ ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। পাঁচ বার দুর্নীতিতে তারা বিশ্বে এক নম্বর হয়েছিল। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বাংলা ভাই, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, আমাদের কত নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে তার হিসাব নেই। আমরা নিজেই বারবার তাদের হাতে আক্রমণের শিকার হয়েছি। তারপরও আমরা কিন্তু দমে যাইনি। বরং এগিয়ে গিয়েছি। আমি তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই, এত বাধা বিপত্তি, অত্যাচার, নির্যাতন, সবকিছু সহ্য করে নেতাকর্মীরা সংগঠনকে ধরে রেখেছেন এবং এগিয়ে যাচ্ছেন।
মানুষকে মানুষ মনে করলে পুড়িয়ে মারত না
বিএনপি মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ হিসেবে গণ্য করলে রেলে আগুন দিয়ে বিএনপি কীভাবে মানুষকে পুড়িয়ে মারল? একটা মা তার ছোট বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য বুকে ধরে রেখেছিল, সেই অবস্থায় মরে কাঠ হয়ে গেল! বাসের ভেতরে হেলপার ঘুমিয়ে ছিল, আগুন দিল, হেলপার পুড়ে শেষ! ঠিক ১৩ ও ১৪ সালের মতো এবারও একই ঘটনা তারা (বিএনপি) ঘটিয়ে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে কার দ্বারা? অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘনকারী, সেনা আইন লঙ্ঘনকারী, ক্ষমতা দখলকারী এক জেনারেলের পকেট থেকে। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। হ্যাঁ-না ভোটের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। ক্ষমতায় বসে থেকে একদিকে সেনাপ্রধান, আরেকদিকে রাষ্ট্রপ্রধান, আবার নির্বাচনও করেছে। এটা সেনা আইন বিরোধী। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে বের হওয়া একটা দল বিএনপি। তাদের কাজের সবকিছুই অবৈধ।
আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির কাজ হচ্ছে জ্বালাও পোড়াও, অগ্নি সন্ত্রাস। এটাই তারা পারে। এটাই তারা ভালো বুঝে, এটাই তারা জানে। নির্বাচনে তারা আসবে না; আসবে কীভাবে বলেন? ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে তো কারো কোনো অভিযোগ নেই। কেউ তো কোনো কথা বলতে পারে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল কী ছিল? সেই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট, তারা পেয়েছিল মাত্র ৩০টা সিট। আর আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছিল ২৩৩টা সিট। এই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। তারা বড় বড় কথা বলে, ভোটের কথা বলে; ওরা ভোটের কী বুঝে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে ৫৮২টা স্কুল, ৭০টি সরকারি অফিস, ছয়টা ভূমি অফিস এবং ৩২৫২টি গাড়ি, ২৯টা রেল, ৯টা লঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। এমনকি জজের এজলাসেও তারা আগুন দেয়। বোমা মেরে ঝালকাঠিতে জজকে হত্যা করে। গাজীপুরে আইনজীবীদের আক্রমণ করল এবং বোমা মেরে আহত করল। এটাই-তো বিএনপির চরিত্র। এখন আবার শুরু করেছে অগ্নিসন্ত্রাস। বাসে আগুন দিচ্ছে, রেলে আগুন দিচ্ছে। নতুন কোচ আমরা কিনেছি, মানুষ যাতে শান্তিতে চলাফেরা করতে পারে। মানুষের শান্তি দেখলে ওদের মনে অশান্তি লাগে। সেগুলোও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে আমরা দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই। কারণ, দুর্নীতি একটি দেশকে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিছু লোক হঠাৎ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়, আর যারা সৎভাবে জীবন যাপন করে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়। সে কারণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স আমরা ঘোষণা দেব। দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়, সমতাভিত্তিক সমাজ, অর্থনৈতিককে ন্যায় এবং সমতাভিত্তিক করে মানুষের জীবনমান উন্নত করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই। সেভাবে আমরা দেশকে গড়ে তুলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ শুধু একটা শব্দ নয়, এর অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নকে স্থায়ী করে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুফল ভোগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা। সেজন্য আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ঠিক করে দিয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ নিতে পারবে তারা। কৃষকদের মধ্যে যারা বর্গাচাষি তারা যাতে জামানত না রেখে কৃষি ঋণ পেতে পারেন সেই ব্যবস্থা করেছি। আমরা কৃষকদের উপকরণ কার্ড দিয়েছি। ২ কোটির উপরে কৃষক এই উপকরণ কার্ড পান, ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। ভর্তুকির টাকা ব্যাংকে সরাসরি তাদের কাছে চলে যায়।
তিনি বলেন, বিএনপির আমলে এই কৃষকরা সার চেয়েছিল বলে তাদের গুলি করা হত্যা করা হয়। আজ আমাদের কৃষকদের সারের পেছনে ছুটতে হয় না। সার কৃষকের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে এ ব্যবস্থা করেছে।