প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে সমস্ত জায়গায় বোমাবাজি, গুলি, অগ্নিসন্ত্রাস, আর আগুন দিয়ে মানুষ মারা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়?
শেখ হাসিনা বলেন, লন্ডনে বসে একটা কুলাঙ্গার হুকুম দেয় আর কতগুলো লোক এখানে আগুন নিয়ে খেলে। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে, এটা তাদের মনে রাখা উচিত। তারা মনে করেছে দুইটা আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে, (ব্যাপরটা) অত সহজ না।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে প্রথম নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি আজকে কী করছে? আমরা যখন দেশের উন্নয়নে কাজ করছি, তখন তাদের কাজ হলো আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো। কোনো মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব বোধ থাকলে এভাবে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে হত্যা করতে পারে না। আজকে তারা রেল পোড়াচ্ছে, বাস পোড়াচ্ছে, গাড়ি পোড়াচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচন ছিল। সেই নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩ সালে এই বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। ৫৮২টা স্কুলঘর-ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়। ৭০টা সরকারি অফিস ভাঙে। ৩ হাজার ২৫২টা গাড়ি পুড়িয়ে ছিল। যেখানে যাত্রীবাহী গাড়ি ছিল, মানুষ সেখানে পুড়ে কয়লা হয়। ২৯টা রেলগাড়ি, ২টি লঞ্চ তারা পুড়িয়ে দেয়। ২০১৩-১৫ পর্যন্ত তাদের অগ্নিসন্ত্রাসে তিন হাজারের বেশি মানুষ পুড়ে যায়। পাঁচশর মতো মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আছে, জনগণের উন্নতি হচ্ছে। আজকে দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলা এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছি।
বিদেশগামীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের যুবসমাজের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি। দালাল ধরে বিদেশে যাওয়ার দরকার নেই। ওই ব্যাংক থেকে আপনারা ঋণ নিতে পারেন, প্রয়োজনে বিনা জামানতে লোন দেওয়া হয়। কাজে সেইভাবে সবাই বিদেশে যাবেন। আর যারা রেমিট্যান্স পাঠায়, ওই হুন্ডি করে পাঠানো না, আমরা ব্যাংক তৈরি করে দিয়েছি। এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থ প্রেরণ করা যায়। অর্থ প্রেরণ সহজ করে দিয়েছি। আজকে সেইভাবে টাকা পাঠালে নিজের একটা সঞ্চয় হবে। আর প্রবাসী যারা কাজ শেষ করে দেশে আসবেন তারাও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন।
চা-শ্রমিকদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করেছি। তাদের খাবার বাসস্থান, চিকিৎসা, ছেলে-মেয়েদের পড়া এবং মজুরি বাড়ানো সব ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সবসময় শ্রমিকদের পাশে আছে। কারণ এই শ্রমিকদের নাগরিকত্ব ছিল না। যে নাগরিককত্ব দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর আমি আসার পরে তাদের জন্য কাজ করি।
জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোট দিতে উপস্থিত জনতার প্রতিশ্রুতি নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত জনতা হাত তুলে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জেবুন্নেছা হক, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, অভিনেত্রী তারিন জাহান প্রমুখ।
সিলেটের এই জনসভার মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভায় যোগ দেওয়ার আগে তিনি হজরত শাহজালাল ও শাহপরানের (র.) মাজার জিয়ারত করেন।
এর আগে বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-৬০১ এর একটি ফ্লাইট সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ওসমানী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপিত শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও বৃহত্তর সিলেটের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।