নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের মধ্যে তীব্রতর ডলার-সংকট চলছে। এ সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নিয়েও কোনো কূলকিনারা পাচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখা হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ২৬৯ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তথ্য অনুযায়ী, গ্রস রিজার্ভ এখন ২১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। তিন বছর আগে যা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল। আর নিট রিজার্ভ ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। কিছু বৈদেশিক ঋণের অর্থ যোগ হওয়ায় গত কয়েক দিনে রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমদানি কমানো, অন্যদিকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে। তবে বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ কমা এবং আগের ঋণ পরিশোধের চাপের কারণে আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি রয়েছে। সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যের ওপর যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে ডলার সংকটের তেমন উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকগুলোর সংকট সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে। বেশির ভাগ ডলার দেওয়া হয়েছে সরকারি খাতের জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানির দায় মেটাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিক্রি করেছিল ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছরে বিক্রি করে ৭৬২ কোটি ডলার। ২০২১ সালের আগস্টের আগ পর্যন্ত ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি ছিল। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পরিমাণ ডলার বিক্রি করে, তার চেয়ে বাজার থেকে কিনতে হয়েছে বেশি। ফলে ওই সময় রিজার্ভ দ্রুত বাড়ে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজারে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনেছিল ৭৯৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
চলমান সংকটের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও আইএমএফসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার ঋণ। গত বৃহস্পতিবার আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আবার আইডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া গেছে আরও ৯০ কোটি ডলার।
এছাড়া গত জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। গত ৪৭ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ২৩০ কোটি ডলার বা ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। সব মিলিয়ে রিজার্ভের সামান্য উন্নতি হয়েছে।