নিজস্ব প্রতিবেদক: রপ্তানি আয় বাড়াতে বিশেষ কিছু খাতে প্রণোদনার বিকল্প খুঁজছে সরকার। ২০২৪ থেকে ২০২৭ সালের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে রপ্তানি নীতি করতে যাচ্ছে, তাতে প্রণোদনা বাদ দিয়ে অন্যান্য নীতি সহায়তা চালুর বিষয়টি রাখা হয়েছে।
বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি নীতি (২০২৪-২০২৭) এর খসড়া অনুমোদন করা হয়।
মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই নীতি চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে।
মন্ত্রিপরিষদের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের বলেন, “নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের রপ্তানি খাতে সম্পৃক্ত করতে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ রয়েছে।”
এতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিওর বিধান অনুসরণ করে রপ্তানিকারকদের আর্থিক প্রণোদনার বিকল্প খুঁজতে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “২০২৪ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত সময়কালের শেষ বছরে ১১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে রপ্তানি নীতিতে।”
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ৮৪ হাজার কোটি টাকা এবং প্রণোদনা বাবদ ১৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা খরচ করার পরিকল্পনা রেখেছিল সরকার। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ সম্প্রতি যেসব অর্থনৈতিক সংস্কারের পরামর্শ নিয়ে এসেছে সেখানে প্রণোদনা কমিয়ে আনার কথা আছে।
২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিদ্যমান বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসাবেও দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে প্রণোদনামূলক নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে সরকার।
সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, “এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে কোন খাতগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে, কোনগুলো দেশের বাইরে ব্র্যান্ডিং করতে হবে, সেই বিষয়গুলো রপ্তানি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
“এখন খসড়াটা অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন হয়েছে। পরবর্তীতে মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের মাধ্যমে এটা পাস হবে।”
খসড়া নীতির উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ, রপ্তানির দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত রূপকল্প প্রণয়ন, রপ্তানিখাতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের সহায়তা, পরিবেশবান্ধব ও বৃত্তাকার অর্থনীতির কৌশল প্রণয়ন।
এতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া খাতের মধ্যে সবজি, হস্ত ও কারুপণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ উন্নয়নমূলক খাতে স্পিনিং ও ফেব্রিক্স মেনুফ্যাকচারিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিংকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ওষুধ শিল্প ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, হস্তশিল্পকে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে।
রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকা ও শর্তসাপেক্ষে রপ্তানি পণ্যের তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত বৈঠকে টিসিবির খোলা বাজার থেকে পণ্য কেনার সুযোগ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “যখন জরুরি প্রয়োজন হয়, তখন সরকার টিসিবির মাধ্যমে চাল, ডাল ও অন্যান্য নিত্যপণ্য কেনাকাটা করে। এটা সরকারি ক্রয় কমিটির পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়।
“জরুরি প্রয়োজনে যেন টিসিবি ক্রয় কমিটি এড়িয়ে সরাসরি পণ্য কিনতে পারে, সেই ধরনের একটা সুযোগ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটি দিয়েছিল। তবে সেই সুযোগ আগামী ২৬ মে পর শেষ হয়ে যাবে। এখন যে এক কোটি পরিবারকে চাল ডাল তেল দিচ্ছে। ফলে পরবর্তী এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ৩০ জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত টিসিবি সরাসরি পণ্য কিনতে পারবে।”