রমজান আলী: ঈদ আসলে নতুন টাকার চাহিদা খুব বেড়ে যায়। ঈদ মানে বাচ্চাদের নতুন জামা-কাপড় ও নতুন টাকা। ঈদে নতুন টাকায় বাড়তি আনন্দ দিয়ে থাকে সব বয়সের মানষের। প্রতিবছর বাড়তি আনন্দ উপভোগ করতে ব্যাংক থেকে সবাই নতুন টাকা সংগ্রহ করে থাকে। নতুন টাকা জাকাত-ফেতরা ও ছোট বাচ্চাদের সালামি হিসেবে দিয়ে থাকে আত্মীয় স্বজন। কারণ নতুন টাকা পেলে সবাই খুশি হয়। সবচেয়ে বাচ্চারা বেশি খুশি হয়ে থাকে নতুন টাকায়। ঈদে বড় আনন্দই হচ্ছে নতুন টাকা। কিন্তু এবছর সেই আনন্দ থেবে বঞ্চিত হচ্ছে সবাই। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক এবছর নতুন টাকা বাজারে দিচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নতুন নোটের বিতরণ স্থগিত করা হয়েছে। এই নতুন নোটে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বাদ দেওয়া হবে এবং পরিবর্তে নতুন নকশায় বিভিন্ন স্থাপনা, গ্রাফিতি এবং জুলাই বিপ্লবের চিত্র রাখা হবে। তাই আপতত বাজারে নতুন টাকা দেয়া হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছুদিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। বঙ্গবন্ধুর ছবি টাকাতে থাকলে ক্ষতির কোনো কিছু দেখছি। বঙ্গবন্ধু এ দেশে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। তিনি বাংলাদেশের স্থপতি। সেই হিসেবে তার ছবি থাকাতেই পারে। তার ছবিতো নতুন টাকাতে এখানে রয়েছে। ছাপানো টাকাগুলো কি করবে ? এগুলো ফেলে দেয়া যাবে না। তাই ছাপানো টাকাগুলো এবারের ঈদে বাজারে দিলেই ভালো হতো।
এছাড়া সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে নতুন নোটের। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নোট বিনিময়ের স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর রাজধানীর নতুন টাকার বাজারে হইচই শুরু হয়েছে। নতুন নোটের দাম বেড়ে গেছে এবং চাহিদা মতো পাওয়াও যাচ্ছে না। বিশেষ করে ১০ টাকার নতুন নোটের দাম প্রতি হাজারে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, অথচ ক্রেতারা পাচ্ছেন না।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক ও গুলিস্তানের মোড়ে নতুন টাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার পরিস্থিতি আগের বছরের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে এই বাজারে নতুন টাকার ব্যাপক চাহিদা থাকে, তবে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। কিছু ব্যবসায়ী নতুন নোটের অল্প কিছু পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সবচেয়ে বেশি চাহিদা ২, ৫, ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোটের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের হাতে যে পরিমাণ নতুন টাকা ছিল, তা এখন প্রায় শেষ। গত বছরের মতো এবারও নতুন টাকার ব্যবসা করতে পারলে, তারা আড়াই শ’ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতেন, কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর ঈদ এলেই বাজারে নতুন নোট ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, কিন্তু এবার ব্যাংকগুলো নতুন টাকার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা এখন হাতে থাকা সীমিত নোট দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন। কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, কারণ নতুন নোটের সরবরাহ নেই। আর যখন বাজারে নতুন নোট নেই, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের দাম বেড়ে গেছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, ঈদে বাজারে নতুন টাকা না ছাড়ার সিন্ধান্ত সঠিক হয়নি। নতুন টাকা ঈদের উৎসবের বড় একটা অংশ। সেই অংশ থেকে বঞ্চিত করা মোটেও ঠিক হয়নি। বঙ্গবন্ধুর ছবি যুক্ত টাকা দিলে কি এমন ক্ষতি হতো জাতির। বঙ্গবন্ধুকে প্রতিহিংসার বাহিরে রাখা উচিত। যারা বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পারে না, তারা মূলত বাংলাদেশ পছন্দ করে। তাদের কাছে বাংলাদেশ পছন্দ না।
বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ১০ টাকার এক বান্ডেল নতুন নোট এখন ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যদিও ওই বান্ডেলের মূল মূল্যমান ১ হাজার টাকা। প্রায় ১০০টি নোটের এক বান্ডেল মিলে এই দামের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্রেতা দর-কষাকষি করার পরও দাম কমাতে পারছেন না। এতে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
নতুন টাকার ব্যবসা মূলত ঈদকে কেন্দ্র করেই হয়, এরপরে খুব কম মানুষ নতুন টাকা কিনতে আসে। গত বছর ঈদের সময় নতুন টাকার ব্যবসা করে ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম, কিন্তু এবার নতুন টাকার সংকটের কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখন সংসার চালানোর জন্য নতুন টাকা বিক্রি করার উপায় নেই।
আরিফ নামে এক ক্রেতা, যিনি নাতি-নাতনিদের জন্য নতুন টাকা কিনতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ঈদে নতুন টাকার সালামি দেয়া আমার জন্য একটি পুরনো রীতি। বহু বছর ধরেই আমি নাতি-নাতনিদের নতুন টাকা দিই। তবে এবার অতিরিক্ত দাম দেখে, মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবার নতুন টাকা না দিলেই হয়তো তাদের মন খারাপ করবে। কিন্তু আমারও তো সংসার চালাতে হবে, তাহলে কী করব?’ তিনি আরও বলেন, ‘দাম বাড়ানোর কারণে অনেকেই এই টাকা কেনার জন্য ফিরে যাচ্ছেন।’
জাফর নামে এক চাকরিজীবীও বলছেন, ‘বড় ভাই হিসেবে ছোট ভাইবোনদের জন্য নতুন টাকা কেনা আমার দায়িত্ব। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আমি তাদের সেই দাবি পূরণ করতে পারব না। এই অতিরিক্ত দাম দিয়ে কীভাবে নতুন টাকা কিনব?’
শাহিনুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, ‘নতুন টাকার ব্যবসা মূলত ঈদকে কেন্দ্র করেই হয়, এরপরে খুব কম মানুষ নতুন টাকা কিনতে আসে। গত বছর ঈদের সময় নতুন টাকার ব্যবসা করে ৩০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম, কিন্তু এবার নতুন টাকার সংকটের কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখন সংসার চালানোর জন্য নতুন টাকা বিক্রি করার উপায় নেই।’