নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে নিত্যপণ্যের আমদানি স্বাভাবিক আছে। তাই রোজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের রমজান ৯ মার্চ শুরু হতে পারে। যদিও এটা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। সেই উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। আমদানিকারক সমিতি, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সবাই ছিলেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্য, রমজানের সময় বাজারে তেল, চিনি, চাল, ছোলা, খেজুর ও পেঁয়াজসহ যেসব পণ্যের বেশি চাহিদা থাকবে, সেগুলোর মজুতের পরিমাণ কী, এবং আগামী মাসে আরও কী পরিমাণ আসছে, আসার পরে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্য আছে কি না; সেটা দেখা। আবার আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা আছে কি না, বা বন্দরে মাল খালাসের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আছে কি না, বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
সচিব বলেন, আমদানি মোটামুটি স্বাভাবিক আছে। আমরা জানি যে, আগে থেকেই অর্থাৎ প্রায় সাত-আট মাস ধরেই চিনি আমদানি একটু কম ছিল, সেটার প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে চিনির আমদানি করা যাচ্ছিল না, যেমন ভারত চিনি রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, ব্রাজিল থেকে আনতেও কিছু বাধা ছিল। এখন নতুন করে আমরা জানি যে, জাহাজের ক্ষেত্রে লোহিত সাগরের চ্যানেলে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে আমরা ভালো অবস্থানে চলে যাবো। নতুন পেঁয়াজ আসবে। ভোজ্য তেলের মধ্যে সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হচ্ছে। আগামী দু-মাসে আরও আমদানি হবে। আলোচনা করে দেখলাম, খেজুরের ক্ষেত্রেও একটা সমস্যা হচ্ছে। খেজুরের শুল্ক নিয়ে একটা দাবি আমদানিকারকদের আছে। তাদের অভিযোগ, এনবিআর থেকে অ্যাসেসম্যান্ট ভ্যালু অনেক বেশি রাখা হচ্ছে। সেটা কমানোর জন্য আমরা লিখেছিলাম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মাল অনেক ক্ষেত্রে বন্দরে এসে গেছে। খালাস হচ্ছে না। আগামীকাল চট্টগ্রাম বন্দরে আমরা খবর নেবো। যদি এ ধরনের বিষয় হয় যে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে, কিন্তু সেটির সেটেলড হয়েছে অনেক কম, এটা আলোচনা করে ফয়সালা করতে হবে। যাতে আগামী দুই মাসের মধ্যে খেজুর চলে আসে।
রমজান উপলক্ষে কতটা বাড়তি আমদানি করতে হবে? প্রশ্নে তিনি বলেন, সাধারণত বছরে বা মাসিক যে চাহিদা থাকে, রমজানে সেটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। যেমন মাসে হয়ত দেড় লাখ টন সয়াবিন তেল লাগে, রমজানে সেটা তিন লাখ টন লাগে। রমজানে চিনিও লাগে দেড় লাখ টনের মতো, যেটা স্বাভাবিক সময়ে ৭৫ হাজার টন। বেশির ভাগ পণ্যই দেড় থেকে দুই গুণ বেশি চাহিদা থাকে। আর সারা বছরে খেজুরের যে চাহিদা, সেটার অর্ধেকটাই রমজানে, ৫০ হাজার টন।
এ বর্ধিত চাহিদা মেটাতে বৈঠক করা হয়েছে। রমজান সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা একটু বেশিই আমদানি করেন, আমরা সেটাকে সহায়তা দেওয়ার জন্য, বন্দর থেকে খালাস কিংবা এনবিআরের শুল্ক নিয়ে যদি কোনো সমস্যা থাকে, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করবো। বাংলাদেশের ব্যাংকের বিষয়েও কথা হয়েছে। অনেক সময় শতভাগ মার্জিন দিয়ে এলসি খুলতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা চাচ্ছন, এটা কমিয়ে দেওয়া বা শূন্য করা যায় কি না। এটা নিয়েও আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি লিখবো।
বিজ্ঞাপন
আমদানি সহজ করে দেওয়া, যাতে পণ্যগুলো বাজারে সহজলভ্য হয়। আমাদের মূল্য উদ্দেশ্য সেটা। কারণ দামের ক্ষেত্রেও সেটার প্রভাব পড়বে। আমরা যদি পণ্যের যথেষ্ট যোগান দিতে পারি, তাহলে ভোক্তারা দামের ক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন। রমজানে খুব ভালোভাবেই এসব পণ্য সরবরাহ করতে পারবো বলে আশা করছি।
রমজান সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য যাতে সহজে আমদানি করতে পারেন ব্যবসায়ীরা, এ জন্য ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে এলসি খুলতে পারেন, সে জন্য অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া অনেকক্ষেত্রে শতভাগ মার্জিন নেওয়া হচ্ছে। এটা আমদানিকারকরা অভিযোগ করেছেন। এসব পণ্যের আমদানিকারকদের দাবি হচ্ছে, তারা শূন্য মার্জিনে আমদানি করতে চান। এটা অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষয় না, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই করতে পারে।
কারণ রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আসবে, সেটার যদি মার্জিন কম রাখেন, তাহলে ভোক্তাদের লাভ হবে। তারা কম দামে পণ্যটি পেতে পারেন। আশা করি, বাণিজ্য ব্যাংকগুলো সেই ভূমিকা রাখবে। তাদেরও এ বিষয়ে লিখবো।
রমজানে প্রতিবছরেই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এর প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমদানিমূল্যের ওপর নির্ভর করে পণ্যের দাম। জাহাজে আনতে কত খরচ হয়, বিমায় কত দিতে হয়! সবকিছু মিলিয়ে দাম নির্ধারিত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি থাকলে এখানেও দাম বেশি হবে, কম হলে কম হবে। আজ পর্যালোচনা করে দেখেছি, তেল ও চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীল আছে। খুব একটা বেশির দিকে না। এর মধ্যে ডাল, ছোলার দামও স্থিতিশীল আছে। পেঁয়াজের দামও কমে যাবে।
রমজানের প্রথম সাতদিন ভোক্তারা একটু বেশি কেনাকাটা করেন, এ কারণে তখন দাম একটু বেশি হয়ে যায়। আশা করি, ভোক্তারাও এ বিষয়ে সচেতন থাকবেন। রোজার প্রথম কয়েকটা দিন যাওয়ার পর দাম কমে আসে, স্থিতিশীল হয়ে যায়। আগে কিনলে লাভবান হতে পারবেন না। রমজানে যেসব পণ্য বেশি প্রয়োজন হয়, সেগুলো আমদানি করতে যাতে ডলার থাকে, সেটা আমি বলেছি। এলসি খুলতে যাতে কোনোভাবে নিরুৎসাহিত করা না হয়। রমজানে যাতে পণ্যের ঘাটতি না হয়।
আমি চাইবো, গত বছর আমরা ৮টি পণ্যের জন্য বিশেষভাবে এলসি খোলার ব্যবস্থা করতে লিখেছিলাম। এ বছরে ৬টি পণ্যের জন্য লিখেছি। এগুলো নিয়েই মূলত আজ আলোচনা করেছি। কালকেই এ বিষয়ে চিঠি লিখবো।
সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম এখনো কমছে না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম, কৃষিপণ্যের দাম কমে আসবে। সেটার দাম কমে এসেছে। আরও কমে যাবে। পেঁয়াজ ও আলুসহ যেসব পণ্য এসময়ে বাজারে উঠে, সেগুলোর দাম কমে এসেছে, আরও কমবে। পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাবে। আলুর দাম আরও কমে যাবে।তিনি বলেন, সমসময়ই নতুন আলুর দাম বেশি থাকে। আর পুরোনো আলু সব খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। ডিমের দাম স্থিতিশীল। ডিমের দাম নিয়ে আমি কোনো সমস্যা দেখছি না। সারাবছর যে পণ্যের দাম একই রকম রাখা যাবে, সেটা না।