নিজস্ব প্রতিবেদক: এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স বা পিএমআই কমেছে। এপ্রিল মাসে এই সূচক ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৬২ দশমিক ২-এ নেমে এসেছে। মার্চ মাসে এই সূচকের মান ছিল ৬৪ দশমিক ৩। অর্থাৎ এপ্রিল মাসে দেশের অর্থনীতির গতি কমেছে।
শিল্পোদ্যোক্তাদের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই বা মেট্টো চেম্বার) ও গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে প্রথমবারের মতো পিএমআই সূচক প্রকাশ করেছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এই সূচক প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল। স্বাগত বক্তব্য দেন এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান।
মেট্টো চেম্বার মনে করছে, এ সূচক প্রকাশের ফলে দেশে তথ্য–উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার যুগ শুরু হবে। শুরুতে প্রান্তিক হিসাবে এবং পরে প্রতি মাসের নির্ধারিত তারিখে এ সূচক নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে মেট্টো চেম্বার ও পলিসি এক্সচেঞ্জ। সেবা, নির্মাণ, কৃষি ও উৎপাদন—এই চার খাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে এ সূচক প্রকাশ করা হবে। সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং ম্যাটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের ইউকে ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এই সূচক প্রণয়নে সহায়তা করেছে।
প্রথমবারের মতো পিএমআই প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলা হয়, সেবা ও নির্মাণ খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের গতি কমে যাওয়ায় এপ্রিল মাসে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়েছে। তবে কৃষি ও উৎপাদন খাতের দ্রুততর প্রবৃদ্ধির কারণে সেই ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া গেছে।
মার্চ মাসে সেবা খাতের পিএমআই ছিল ৬৩ দশমিক ৬, এপ্রিল মাসে তা কমে ৫৬ দশমিক ২-এ নেমে আসে। মার্চ মাসে নির্মাণ খাতের পিএমআই ছিল ৬৭ দশমিক ৭, এপ্রিলে যা নেমে আসে ৬৩ দশমিক ৮-এ। তার মানে এই দুই খাতের উৎপাদন কর্মকাণ্ড মার্চের চেয়ে এপ্রিলে খারাপ ছিল।
তবে কৃষি ও উৎপাদন খাতের সূচক বেড়েছে। মার্চে কৃষি খাতের পিএমআই ছিল ৫৫ দশমিক ৭, এপ্রিলে তা বেড়ে হয়েছে ৬০ দশমিক ৯; মার্চে উৎপাদন খাতের সূচকের মান ছিল ৬৮ দশমিক ৪, এপ্রিলে তা বেড়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৫—অর্থাৎ এ দুই খাতে মার্চের চেয়ে এপ্রিলে উৎপাদন বেশি ছিল।
পিএমআই প্রকাশ অনুষ্ঠানে কামরান টি রহমান বলেন, পিএমআই অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচক। এই সূচকের ভিত্তিতে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে নীতি–সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির মতো সূচকের সঙ্গে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ধীরে ধীরে এই সূচক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠবে। এর মধ্য দিয়ে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার যুগ শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে পিএমআইয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্টের (এসআইপিএমএম) নির্বাহী পরিচালক স্টিভেন পোহ ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদন ও পরিষেবা—এই ৪ খাতের ৫০০টির বেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে পিএমআই প্রকাশ করা হবে। শুরুতে প্রতি প্রান্তিকে এই সূচক প্রকাশ করা হবে, পরে তা প্রতি মাসে প্রকাশিত হবে। সূচক তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্যের ক্রয়াদেশ, মজুত, উৎপাদন, সরবরাহ পরিস্থিতি ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হবে।
পিএমআই শূন্য থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পরিমাপ করা হবে। আগের মাসের তুলনায় স্কোর ৫০-এর বেশি হলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ আর তার নিচে হলে সংকোচন বোঝাবে। স্কোর ৫০ হলে ধরে নিতে হবে, ওই প্রান্তিকে কোনো পরিবর্তন, অর্থাৎ অর্থনীতির সংকোচন বা প্রসারণ হয়নি।