অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
ঈদের পরে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি কম। বিক্রেতারা এখনও ঠিকভাবে দোকান খোলেননি, ক্রেতারাও আসছেন কম। কিন্তু এমন ফাঁকা পরিস্থিতিতেও বাজারে প্রায় সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে উচ্চ দামে। ক্রেতাশূন্য বাজারে গতকাল ব্রয়লার মুরগি ২৪০ টাকা, গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজ-রসুনসহ প্রায় সব ধরনের সবজি এবং বিভিন্ন রকমের মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, সাপ্লাই কম থাকায় দাম বেশি। কেউ কেউ বলছেন পণ্যের দাম আরও বাড়বে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন কাজার ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র। বাজারে সব দোকান খোলেনি। যারা দোকান খুলেছেন তারাও অন্যান্য সময়ের মতো সব পণ্য ঠিকঠাক মতো আনেননি। এমন পরিস্থিতিতেও বাজারের প্রায় সব ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে উচ্চ দামে।
ঈদের আগে থেকেই মাংসের বাজার গরম। ঈদ শেষেও তার কোনও পরিবর্তন আসেনি। ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও তা এখনও রয়েছে ২৪০ টাকার ওপরে। ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২৩৫-২৪০ টাকা, কক মুরগি ৩৩০-৩৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৮০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মুরগির লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের আগের সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ৫-১৫ টাকা। অপরদিকে গরুর মাংস ও লেয়ার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে যথাক্রমে ১০-২০ টাকা ও ৫ টাকা। আর উচ্চমূল্যে অপরিবর্তিত রয়েছে দেশি মুরগি ও খাসির মাংসের দাম।
ব্রয়লার মুরগির দাম কেন এখনো বেশি জানতে চাইলে আল-আমিন চিকেন হাউজের বিক্রেতা বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে তো। এখন ক্রেতা কম বলে কিছুটা দাম কমেছে। ক্রেতা থাকলে দাম কমতো না, আরও বাড়তো।
দেশি মুরগির এখনো ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা নেই, কিন্তু দাম কেন বেশি জানতে চাইলে বিক্রেতা শহিদুল্লাহ বলেন, দেশি মুরগি আসতেছে না, তাই দাম বেশি। ঠিকমতো আসা শুরু করলেই দাম কমে যাবে।
ব্রয়লার মুরগি কিনতে আসা এক ক্রেতা মো. লিটন বলেন, এখন তো ঈদ নাই, তাও দাম বেশি। দুইশো ত্রিশ টাকার ওপরে ব্রয়লার মুরগি কিনতে হচ্ছে, এটা কোনও কথা হলো?
আরেক ক্রেতা মোজাম্মেল বলেন, ঈদের আগের থেকে ব্রয়লার মুরগির দাম সামান্য কমেছে। কিন্তু এটাকে কোনোভাবেই কম দাম বলে না।
এদিকে বাজারে মাংসের সঙ্গে বেড়েছে আলু-পেঁয়াজ-আদা-রসুনের দামও। মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৫০-৫৫ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৮০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত ৫ এপ্রিলের দামের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। দেশি রসুনের ও চায়না রসুনের দাম আবারও বেড়েছে ২০ টাকা। এছাড়া আলুর দাম ৫-১০ টাকা ও চায়না আদার দাম ২০ টাকা বেড়েছে প্রতি কেজিতে।
দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আলু পেঁয়াজ বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, দাম যে কেন হুট করে বেড়ে গেলো জানি না। ঈদে মানুষের চাহিদা বেশি থাকাই কারণ হতে পারে। তবে আলুর আলুর দাম আরও বাড়বে এটা বুঝতে পারছি।
এদিকে রোজার সময় সবজির বাজার নিম্নমুখী থাকলেও বাজারে প্রায় সব সবজির দামই বাড়তি রয়েছে। শিম ৬০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, দেশি গাজর ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা , ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০-১০০ টাকা, সজনে ১৫০ টাকা, কচুরমুখী ১৫০, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, ধনেপাতা ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৫০-৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০-৬০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম, প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা।
দাম বেশি হওয়ার বিষয়ে সবজি বিক্রেতা রাজিব বলেন, মাল কম পাচ্ছি আমরা। ক্রেতা কম থাকলেও মালতো আনতে হচ্ছে। আমাদের পরিবহন খরচ তো ঠিকই দিতে হচ্ছে। তাই দাম বেশি।
হযরত নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, রোজার মাসে অনেক কম দামে সবজি পেয়েছে ক্রেতারা। এখন শুধু দাম বাড়বে। বাজারে যত ক্রেতা বাড়বে দাম ততই বাড়তে থাকবে।
অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে মাছের দামও বাড়তির দিকে। কিছু মাছের দাম বেড়েছে অত্যাধিক হারে। আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১২০০- ২২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৬০-৫০০ টাকা, কাতল মাছ ৩৮০-৫৫০ টাকা, কালবাউশ ৪৬০- ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ -১২০০ টাকা, কাঁচকি ৮০০ টাকা, কৈ ৩০০-৫০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ টাকা, শিং ৪০০-৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ১৫০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০- ১২০০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০ টাকা, কাজলী ১৮০০-২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মোটামুটি সবসময় ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া কাঁচকি আজ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। আর ১০০০-১৪০০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাজলী মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০-২০০০ টাকায়।
হঠাৎ এতো দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা হায়দার এক কথায় বলেন, ভালো জিনিসের দাম বেশিই হয়। কিন্তু এতো বেশি হয় কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নদীর মাছের দাম বেশি হয়।
এসময় কাজলী মাছ কিনতে এসে আফজাল হোসেন বলেন, ২ হাজার টাকা কেজি চেয়েছে কাজলী মাছ। অনেক দামাদামি করে ১৮০০ টাকায় নিতে পেরেছি। আমি না হয় কিনতে পারলাম। কিন্তু অন্যরা কি এই দামে কিনতে পারবে? অত্যাধিক দাম রাখছে তারা।
আরেক ক্রেতা মোহাইমিন হোসেন বলেন, আমি সবসময় এই বাজার থেকেই বাজার করি। কাঁচকি মাছের দাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার বেশি কখনও দেখিনি। আজকেই দেখলাম ৮০০ টাকা। কিনতে এসেও কিনলাম না। কাঁচকি মাছ আর গরুর মাংস আজ একই দামে বিক্রি হচ্ছে। কী একটা অবস্থা!
এদিকে সবকিছুর দাম বাড়তে থাকলেও মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০- ১৪০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেশারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩৫, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।