অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক: দিন দিন মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) ওপর মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। একইসঙ্গে এ খাতে বাড়ছে মানুষের নির্ভরশীলতা। গ্রাহকের সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত হিসাবের মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১২ কোটি ৭১ লাখ ৮১ হাজার ও নারী ৯ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩২১।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এই অঙ্ক এযাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড লেনদেন। এর আগে একক মাসে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল গত বছরের জুনে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেলেন সঙ্গে দিনদিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টির মতো ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৯১ লাখ ৭৩ হাজার জন। গ্রাহক বেশি হওয়ার কারণ অনেক গ্রাহক একাধিক সিম ব্যবহার করছে। লেনদেনের সুবিধার্থে একাধিক সিমের হিসাব খুলছে।
নিবন্ধিত এসব হিসাবের মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১২ কোটি ৭১ লাখ ৮১ হাজার ও নারী ৯ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩২১। এখন গ্রাহক ঘরে বসেই ডিজিটাল কেওয়াইসি (গ্রাহকসম্পর্কিত তথ্য) ফরম পূরণ করে সহজেই এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে হিসাব খুলতে পারছেন।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যানসিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এরপর ‘নগদ’-এর অবস্থান।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এখন গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেওয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। পোশাকখাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। যার ফলে দিনে দিনে নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে।
জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পাঠানো হয়েছে ৪০ হাজার ২২৮ কোটি টাকা আর উত্তোলন হয়েছে ৩৭ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। এ সময় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ৩৫ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ৪ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার ২ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটায় ৫ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এছাড়া ৫৯৩ কোটি টাকার প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে।
ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আরিফ কাদরী বলেন, ‘সুবিধার ফলে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বাড়ির পাশে ব্যাংকিংয়ের অনেক ধরনের সুবিধা পাচ্ছে বলে এর নপ্রিয়তা বাড়ছে। এছাড়া সাধারণ মানুষরা এজেন্ট ব্যাংকিং সহজ মনে করেন।’