কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (সিএমএসএমই) ঋণ দিয়ে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। এই মুহুর্তে করর্পোরেট ঋণে যেতে চাচ্ছি না। কারণ দেশে সিএমএসএমই খাতে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এতে একদিকে দেশের মানুষের উপকার অন্যদিকে ব্যাংকেরও উপকার হবে। কারণ সিএমএসএমই খাতে ঋণ দেয়া যেমন নিরাপদ অন্য দিকে অনেক মানুষের সাথে ব্যাংকিং করার সুযোগ হবে বলে এমটাই জানালেন ব্যাংকটির এমডি এবং সিইও তারেক রিয়াজ খান।
২০১২ সালে অনুমোদন দেয়া হয় নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংককে, যে সিদ্ধান্তকে অনেকেই বলেছিলেন ‘রাজনৈতিক বিবেচনা’। পরে নানা অনিয়মের কারণে ২০১৯ সালে নাম পরির্তন করে ওই বাংকই এখন পদ্মা ব্যাংক। ২০১৯ সাল থেকে নতুন ব্যাবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে ব্যাংকটি। বর্তমানে ব্যাংকটির এমডি এবং সিইও তারেক রিয়াজ খান। ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা, আগামীর পদক্ষেপ জানতে সকলের সংবাদ-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন তারেক রিয়াজ খান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সকলের সংবাদ-এর অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক সাবিনা আক্তার।
সকলের সংবাদ: গত দুই বছরে তেমন কী পরিবর্তন করতে পেরেছেন ব্যাংকটির ?
তারেক রিয়াজ খান: বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকে ১ লাখ ৫০ হাজার হাজার গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে গত দুই বছরেই গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজারের মত। এছাড়া অনেক সংকটের মধ্যে গত তিন বছরে সাড়ে ৩’শ কোটি টাকা আমানত পেয়েছি। তাতে বর্তমানে আমানতের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৬ হাজার ২৪১কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের পরিমাণ ৫ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। খেলাপির ঋণ ৬৭ শতাংশ থেকে ৬১ দশমিক ৮৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি। এছাড়া পাঁচটি ইসলামী উইন্ডো চালু করেছি। গত দুই বছরে দুটি পূর্ণাঙ্গ শাখা এবং ১৪টি উপশাখা বেড়েছে পদ্মা ব্যাংকের। গত পাঁচ বছরে পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদের সহযোগিতা ও কর্মীদের দক্ষতার কারণে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ৮৭৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। একই সময়ে সাধারণ আমানতকারীদের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এগুলো কিন্তু বড় অর্জন।
সকলের সংবাদ: ব্যাংকের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাবেন কী ?
তারেক রিয়াজ খান: ব্যাংকের ভালো ও নির্ভরযোগ্য বোর্ড অফ ডিরেক্টরস রয়েছেন। বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা পরিষদের মধ্যে স্বচ্ছতা আছে। তাই অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথমত একটি ভালো ব্যাংক তৈরি করতে যা যা পরিকল্পনা দরকার সব ধরণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আগামী ২০৩৩ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা। আমানত বাড়ানো, ঋণ বিতরণের পাশাপাশি আদায়ের দিকেও জোর বেশি দিচ্ছি। এছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে পদ্মা ব্যাংক গ্রাহককে স্মাট সেবা দেয়া চিন্তা নিয়ে কাজ করছি। পদ্মা ব্যাংক এখন একেবারেই প্রান্তিক মানুষকে সেবা দিবে। প্রান্তিক মানুষকে সেবা দিযে তাদেরকেও স্মার্ট উদ্যোক্তা তৈরি করবে পদ্মা ব্যাংক। প্রান্তিক মানুষকে সব ধরনের সেবা দিবে পদ্মা ব্যাংক। বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের ৬০টি শাখা, ও ৬টি উপশাখা রয়েছে। এবছর আরও ৩০টি উপশাখা করার পরিকল্পনা চলছে। যা শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই উপশাখাগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে নিয়ে যেতে চাচ্ছি আমরা। আমাদের পরিচালনা পর্ষদও চাচ্ছে গ্রামীণ পর্যায়ে আমরা উপশাখাগুলো প্রতিষ্ঠিত করি।
সকলের সংবাদ: আমানত সংগ্রহে কোন স্কীম চালু রয়েছে কী ?
তারেক রিয়াজ খান: আমানতের জন্য বিশেষ কিছু স্কিম চালু করেছি। যেখানে প্রতিদিন ব্যাংকে আমানত রেখে প্রতিদিন মুনাফা নেয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া আকর্ষণীয় কিছু স্কিম চালু রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন চারটি ব্যাংকিং স্কিম রয়েছে পদ্মা ব্যাংকে। স্কিমগুলো হলো, পদ্মা নেক্সটজেন অ্যাকাউন্ট, পদ্মা মাস্টার মাইন্ড অ্যাকাউন্ট, পদ্মা স্পিরিট মান্থলি ডিপোজিট প্ল্যান এবং পদ্মা ব্যাংক স্টুডেন্ট ফাইল। এছাড়া রয়েছে মাসিক ইনকাম স্কিম, টার্গেট ডিপোজিট স্কিম এবং পদ্মা অগ্রজ নামে আমানতের স্কিম চালু রয়েছে।
সকলের সংবাদ: আরও অনেক ব্যাংক থাকতে কেন গ্রাহকরা পদ্মা ব্যাংকে আসবে?
তারেক রিয়াজ খান: আসলেই কেন আসবে ? কারণ গ্রাহকের সব সরধনের সেবা রয়েছে হাতে মুঠোও। পদ্মা ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেকটা উন্নতি হয়েছে, মানুষের আস্থাও বাড়ছে। গ্রাহকের সাড়া ভালো সাড়া পাচ্ছি বিধায় আমানত ও গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই বছরে গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজারের মত। তাতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। ফলে আমানত ও গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া গ্রাহকরা ঘরে বসে সব ধরনের সেবা পেতে পারে সে জন্য রয়েছে একটি অ্যাপ, নাম পদ্মা ওয়ালেট। এই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা ঘরে বসেই ব্যাংকের একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে সব ধরণের লেনদেন করতে পারে। এছাড়া পদ্মা ব্যাংকের ডেবিট কার্ড দিয়ে ‘বিনা মাশুলে’ দেশের যেকোন ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলতে পারছেন গ্রাহকরা। গ্রাহকের নিরাপদ ও দ্রুত ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে কোর ব্যাংকিং সিস্টেম চালু রয়েছে পদ্মা ব্যাংকে। এছাড়া অনলাইনেও আমাদের ব্যাংকের সেবা মিলছে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে।
সকলের সংবাদ: সবচেয়ে বেশি ঋণ দিচ্ছেন কোন খাতে ?
তারেক রিয়াজ খান: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে তাদের অর্থায়ন করছে পদ্মা ব্যাংক। তাদের কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (সিএমএসএমই) ঋণ দিয়ে এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। এই মুহুর্তে করর্পোরেট ঋণে যেতে চাচ্ছি না। প্রান্তিক মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দেয়ার জন্য উপশাখার ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। গ্রামের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আমরা অবদান রাখতে চাই। কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি, গাড়ি কেনার ও বাড়ির তৈরির ঋণ বেশি দিচ্ছি। কারণ সিএমএসএমই খাতে ঋণ দেয়া যেমন নিরাপদ অন্য দিকে অনেক মানুষের সাথে ব্যাংকিং করার সুযোগ থাকে।
সকলের সংবাদ: পদ্মা ব্যাংকের চ্যালেঞ্জগুলো জানতে চাই ?
তারেক রিয়াজ খান: পদ্মা ব্যাংকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারমধ্যে আমানত সংকট। বড় খেলাপির কাছ থেকে ঋণ আদায়। এছাড়া যেসব খেলাপিদের মামলা রয়েছে সেগুলো থেকে দ্রুত অর্থ আদা