বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ল্যাব উদ্বোধন করলো মাল্টিন্যাশনাল বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটন। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানটিকে গবেষণার জন্য ওয়ালটনের তৈরি তাকিওন ১.০০ মডেলের ইলেকট্রিক বাইক উপহার প্রদান করা হয়।
গবেষণা ও উদ্ভাবনে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয়ে ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবরেশনের অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ল্যাব। ল্যাবটির পৃষ্ঠপোষকতা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ওয়ালটন গ্রুপের অন্যতম অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ল্যাবের উদ্বোধন করেন বুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার এবং ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম।
এ সময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এএমডি) লিয়াকত আলী, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র এএমডি মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল শায়েখুজ্জামান, বুয়েটের রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (রাইজ) পরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান তালুকদার, ফ্যাকাল্টি অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের ডিন প্রফেসর ড. আবু রায়হান মো. আলী, ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্সের ডিন প্রফেসর ড. জীবন পোদ্দার, ফ্যাকাল্টি অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন প্রফেসর ড. মো. এহসান, ফ্যাকাল্টি অব ইইই’র ডিন প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম, ফ্যাকাল্টি অব আর্কিটেকচার এন্ড প্লানিংয়ের ডিন প্রফেসর ড. ইশরাত ইসলাম এবং ফ্যাকাল্টি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন প্রফেসর ড. মো. শফিউল বারি, ওয়ালটন কম্পিউটারের চিফ বিজনেস অফিসার (সিবিও) মো. তৌহিদুর রহমান রাদ এবং ওয়ালটন ডিজিটেকের ডেপুটি হেড অব মার্কেটিং তানজিমুল হক তন্ময় প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ওয়ালটন ডিজি-টেকের বিভিন্ন প্রোডাক্ট লাইন নিয়ে বিস্তারিত প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন সিবিও মো. তৌহিদুর রহমান রাদ।
ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী মেধায় সমৃদ্ধ। কিন্তু গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় তারা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখন ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবরেশনের মাধ্যমে তারা ওয়ালটনে গবেষণা ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করতে পারছেন। সেজন্য ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের সবার অবদানে দেশীয় শিল্প খাত সমৃদ্ধ হবে। বাংলাদেশের পণ্য বিশ্বজয় করবে। ওয়ালটন বাংলাদেশের টেক জায়ান্ট। ওয়ালটন এখন অনেক বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বুয়েট সবসময়ই ওয়ালটনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। আমাদের প্রকৌশলীরা ওয়ালটনের মতো দেশীয় প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পেরে গর্ববোধ করছে। এই রিসার্চ ল্যাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ওয়ালটন এবং বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। স্থানীয় শিল্প খাতের উন্নয়নে বুয়েট সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। আমরা দেশীয় পণ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে সরকারকে সবময় পরামর্শ দিয়ে আসছি। দেশীয় শিল্পকে নীতিগত সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আরও আন্তরিক হতে হবে।
ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম বলেন, আমাদের প্রকৌশলীরা মেধাবী। তাদের মেধা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের যে সামর্থ্য আছে, সেটার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের শিল্প খাত অনেক এগিয়ে যাবে। দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা সমৃদ্ধশালী হবো। দেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা ও উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তাদের কাজের স্বীকৃতি ও ব্র্যান্ডিং হচ্ছে না। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজের সমন্বয় ঘটছে ওয়ালটনে। ফলে মেধাবীরা ওয়ালটনে সুযোগ পাবেন প্রযুক্তি নিয়ে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ওয়ালটনকে অন্যতম সেরা গ্লোবাল ব্র্যান্ডে পরিণত করার মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। দেশের মেধাবী প্রকৌশলীরা যখন দেশেই গবেষণা ও উদ্ভাবনের পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন, তখন সেই লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে। সেজন্য ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবরেশনের মাধ্যমে এই ল্যাব তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইনোভেশন ও প্রযুক্তিগত শিল্পের উন্নয়নে ওয়ালটন এবং বুয়েট এক সঙ্গে কাজ করছে। বুয়েটের সঙ্গে আমাদের এই সুগভীর সম্পর্ক চলমান থাকবে। আমাদের প্রত্যাশা, এই রিসার্চ ল্যাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বনামধন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবং ওয়ালটন উভয় পক্ষই উপকৃত হবেন।
রিসার্চ ল্যাব উদ্বোধনের পাশাপাশি বুয়েটকে নিজস্ব কারখানায় তৈরি পরিবেশবান্ধব ই-বাইক- ‘তাকিওন ১.০০’ উপহার দিয়েছে ওয়ালটন। বুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলরের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-বাইকের চাবি হস্তান্তর করেন ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম।
জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন মডেলের এই ইলেকট্রিক বাইক বাজারে ছাড়ে ওয়ালটন। পরিবেশবান্ধব এই ই-বাইক সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারে আসে ৩টি ভার্সনে। মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা চার্জে এই বাইকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দেয়া যায়। প্রতি কিলোমিটারে সর্বোচ্চ খরচ পড়ছে মাত্র ১৫ পয়সা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি গবেষণার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ওয়ালটন। ওয়ালটন কারখানায় বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা ও উদ্ভাবন (%B