নিজস্ব প্রতিবেদক: পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ডের বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। আজ রবিবার বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের পর বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এই প্রশ্ন তোলেন।
তিনি বলেন, ‘যে বিচারের কথা আমরা শুনেছি সেই বিচার হয়েছে, সেই বিচার কি হয়নি, সেই বিচারে কি আপিল হয়েছে, সেই আপিলের শুনানি আজকে ১৫ বছর পার হয়েছে। তার পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে আরেকটি বিস্ফোরক মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলার বিচারকাজ আজকে পর্যন্ত কেন বিলম্বিত হচ্ছে? একটি কথা আছে আমাদের বাংলা ভাষায় যে, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে।’
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘ইংরেজি ভাষায় একটি কথা আছে যে, যদি বিচার বিলম্বে হয় তাহলে সেই বিচারের কোনো মূল্য থাকে না। কাজেই আজকে আমরা শুনেছি যে, সেই বিচার প্রক্রিয়া এখনো ঝুলে আছে। কেন ঝুলে আছে, কেন সেই অভিযোগে যাদেরকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে তারা আজ পর্যন্ত বিনা বিচারে কেন কারাবাস করছে?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একটি জাতির ইতিহাসে এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা কোনো জাতির ইতিহাসে কখন ঘটেছে আমাদের জানা নেই। আজকে আমরা শুধু একটি কথাই বলব, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক যেন সুশাসনের মাধ্যমে, আইনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পান আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি। অপরাধী শাস্তি পাবে সে সম্বন্ধে আমাদের কিছু বলার নাই।’
‘কিন্তু আমরা যে আইনের ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি, তার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের প্রোসপোডেন্স এবং জাস্টিস সিস্টেম দাঁড়িয়ে আছে সেখানে একটি কথা বলা আছে সেই কথাটি হচ্ছে যে, কোনো দোষী ব্যক্তি যদি কোনো আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে যায় সেটা হতে পারে না। কিন্তু একজন নির্দোষ ব্যক্তিও যেন কখনো শাস্তি না পায়। আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি, সেই নীতিতে বিশ্বাস করে আমরা আজকে প্রতিটি বিডিআর দুঃখজনক ট্র্যাজেডির প্রতিটি মানুষ যারা এই সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত হয়েছে তাদের সুবিচার আমরা কামনা করি,’ যোগ করেন মঈন খান।
তিনি আরও বলেন, ‘বিচারকাজে কখনো কোনো ইন্টারফেয়ারেন্স করা এটা যুক্তিযুক্ত নয়। এটা বিচারাধীন বিষয় আছে…আমাদের যারা বিচারক রয়েছেন তাদের যে নীতি সেই নীতিতে অবিচল থেকে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে এই বিষয়টি অতি দ্রুত সুরাহা করবেন আজকে ১৫ বছরের পরে আমরা সেই প্রত্যাশা করি।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল বনানী সামরিক কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। এ সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহি আকবর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল জয়নাল আবেদীনসহ তৎকালীন বিডিআরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০০৯ সালে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআরের কতিপয় বিপদগামী উচ্ছৃঙ্খল সদস্যদের হাতে নিরস্ত্র সেনা সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের ১৫তম শাহাদাত বার্ষিকীতে নিহতদের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণের এই শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠান হয়।
পিলখানার বিদ্রোহ ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যা হয়। ওই ঘটনায় হত্যা মামলয়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৪২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।