নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে বেড়েছে বিদেশি ফল চাষ। ড্রাগন, বারোমাসি থাই আম, স্ট্রবেরি, মাল্টা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। উত্তর-দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে এ ধরনের ফলের ব্যাপক আবাদ হচ্ছে। বাণিজ্যিক চাষাবাদ সম্প্রসারণ করা গেলে পুষ্টির চাহিদা তো পূরণ হবেই, আমদানি কমিয়ে বাঁচানো যাবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে আমরা ফলের রাজ্যে বাস করছি। ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রধান ফসলের উপর চাপ কমে গিয়ে সুষম পুষ্টি প্রাপ্তির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে মাথাপিছু ফল খাওয়ার পরিমাণ ছিল মাত্র ৫৫ গ্রাম। প্রকল্পের সাফল্যে ফলের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে মাথাপিছু ফল খাওয়ার পরিমান ৮৬ গ্রামে উন্নীত, যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১০ টি শীর্ষস্থানীয় মৌসুমী উৎপাদনকারী দেশের একটি। এছাড়াও বিগত ১৮ বছর ধরে দেশে প্রতি বছর গড়ে ১১.৫% হারে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের শুরুতে বার্ষিক ফল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি মে.টন আর বর্তমানে ১ কোটি ৫০ লক্ষ মে.টন।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পটি জুলাই ২০১৫ হতে জুন ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদে কৃষি মন্ত্রনালয়ের তত্ত্বাবধানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক দেশের ৫১টি জেলায় ৭৪ টি হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার জন্য প্রকল্পটির মেয়াদকাল আরও দুই বছর বাড়িয়েছেন।
এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের পার্বত্য এলাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের অনাবাদি জমিকে ফল চাষের আওতায় নিয়ে আসা, সারা বছরব্যাপী ফল প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফল এবং দেশে চাষ উপযোগী বিদেশী ফলের আধুনিক ও উন্নত জাতের সম্প্রসারণ, দেশের যে সমস্ত জেলায় হর্টিকালচার সেন্টার নেই, সে সকল জেলায় আধুনিক হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন, ফলের প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রপ্তানীযোগ্য ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা।
দেশে পূর্বে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত আম পাওয়া যেতো। বর্তমানে নতুন নতুন আমের জাতের সম্প্রসারণের ফলে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত আম পাওয়া যাচ্ছে। বারি আম-৪, গৌড়মতি, যাদুভোগসহ বিবিধ নাবী জাতের আমের সম্প্রসারণের ফলে দেশে আম প্রাপ্তির সময় বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের কাটিমন জাতের আম চাষ সম্প্রসারণের ফলে সারা বছরই আম প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে আম উৎপাদনে ৭ম এবং প্রতি বছর ১৬ শতাংশ হারে আমের উৎপাদন বাড়ছে। প্রকল্পের শুরুতে আমের উৎপাদন ছিল ২০.২৩ লক্ষ মে.টন আর বর্তমানে আম উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ৩০ লক্ষ মে.টন।
দেশে এখন সারা বছরই পেয়ারা পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও দেশে শুধু বর্ষা মৌসুমে পেয়ারা পাওয়া যেতো। প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বর্তমানে সারা বছরই পেয়ারা পাওয়া যাচ্ছে। এ পেয়ারার মধ্যে থাই জাতের পেয়ারার চাষ সম্প্রসারণ উল্ল্যেযোগ্য। বিগত ১০ বছরে দেশে পেয়ারা উৎপাদন হয়েছে দ্বিগুন। দেশে উৎপাদিত পেয়ারার ৭০ শতাংশই থাই জাতের পেয়ারা। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে পেয়ারা উৎপাদনে ৭ম স্থানে রয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পেয়ারার উৎপাদন ছিল ৪.১৩ লক্ষ মে.টন আর ২০২১-২২ অর্থবছরে পেয়ারার উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৭.৩১ লক্ষ মে.টন।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ বলেন, দেশে এখন দেশে বার মাসই বিদেশি সবধরনের ফলের চাষ হচ্ছে। আম, ড্রাগনে, মাল্টা, আনারস, কমলা, দেশি স্ট্রবেরি, বলসুন্দরী কুলসহ রাম্বুটান, আরবী খেজুর, পার্সিমন, লংগান, এভোকাডো ইত্যাদি ফলের আধুনিক ও উন্নত জাতের চারা/কলম রোপন করা হয়েছে। এছাড়া, এভোকাডো, রামবুটান, আরবী খেজুর, পার্সিমন ইত্যাদি বিদেশী ফল চাষ সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। ফলে বিদেশি ফল আমদানির পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে।
তিনি আরো বলেন, এখন দেশের ২৫টি জেলায় স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। দেশের আবহাওয়ায় খুবই উপযুক্ত। চাহিদার দিক থেকেও আশাব্যঞ্জক। এতে পানি বেশি লাগে না। গোবর সার হলেই হয়। মে, জুন, জুলাই আমরা গ্রীষ্মের ফলগুলো পাই। এরপর একটা গ্যাপ হয়। সে সময়ে ড্রাগন ফলের মাধ্যমে চাহিদা পূরণ সম্ভব। আবার লেবুজাতীয় ফল বিশেষ করে মাল্টা আমরা এখন প্রায় সারা বছর পেতে পারি। পাহাড়ি এলাকায় এটি প্রচুর উৎপাদন করা হচ্ছে।