নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ বেড়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। শনিবার রাজধানী ঢাকা ও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হলো।
দাবদাহের প্রভাবে শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত হিট স্ট্রোকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়া সূত্রমতে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চলমান এই তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে ধানী জমিতে কাজ করছিলেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন (৩৩)। এ সময় প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোক করেন তিনি। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়।
স্বজনরা জানান, ধানের জমিতে সেচ দেওয়ার সময় মাঠে স্ট্রোক করেন জাকির। অন্য কৃষকরা উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই তার মৃত্যু হয়।
দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, ‘এক রোগী স্ট্রোকজনিত কারণে হাসপাতালে আসে। কিন্তু হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।’ জাকির হোসেন দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার সীমান্ত সংলগ্ন ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে। তিনি ঠাকুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি ছিলেন।
এদিকে পাবনা সদরে সুকুমার দাস (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুরে শহরের রুপকথা রোডে একটি দোকানে চা খাওয়ার সময় হিট স্ট্রোক করেন সুকুমার। এসময় আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী রাজধানীর মতিঝিলে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকের বরাতে জানান, ওই বৃদ্ধ হিট স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেছেন।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শনিবার পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এই জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহের সর্বোচ্চ মাত্রা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘টানা ৪ দিন ধরে এ জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে টানা ৯ দিন ধরে। এটা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।’
দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিনে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। ঢাকায় রেকর্ড করা হয়েছে বছরের সর্বোচ্চ ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। রাজধানী ও দেশে এটি এ মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আগামী অন্তত দুই দিন তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
চলতি এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে। কিন্তু এরপর থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা ১৫ এপ্রিল তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নেয়। এই তীব্র তাপপ্রবাহ ক্রমান্বয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গতকাল থেকে দেশের একাধিক এলাকায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে।
দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আগামী সাতদিন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। রবিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা ২৮ এপ্রিল খুলবে বলে জানানো হয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোর পক্ষ থেকে পৃথকভাবে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি (প্রাত্যহিক সমাবেশ) বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। কিছুক্ষণ পরে পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, চলমান তাপপ্রবাহে শিশুশিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশুকল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।
এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে মাউশির অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। এর ফলে এই ছুটি থাকবে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত।